টেস্ট ক্রিকেটে অন্তত দুই হাজার রান ও ১৫০ উইকেট নেয়া অলরাউন্ডারদের তালিকায় নাম আছে ২১ জন ক্রিকেটারের। সেখানে আছেন বিনু মানকড়ও। ১৯৭৮ সালে মৃত্যু বরণ করা এই ভারতীয় অলরাউন্ডার ব্যাটিং করতেন ডান হাতে আর বাঁ হাতে করতেন অর্থোডক্স স্পিন। ৪৪ টেস্টের পারফর্ম্যান্স বা ডানহাত- বাঁহাতের আলাদা আলাদা দক্ষতার জন্য নয়; মানকড় বিখ্যাত হয়ে আছেন ‘মানক্যাড’ নামের চিরবিতর্কিত এক ডিসমিসালের জন্ম দিয়ে। ক্রিকেট আইনে যা বৈধ। কিন্তু কোনো ক্রিকেটার ‘মানক্যাডিং’ করে বসলে প্রশ্ন উঠে যায় তার ক্রিকেটীয় সততা নিয়ে!

mankading controversy in cricket

প্রায়ই দেখা যায় বোলার ছুটছেন বল হাতে, আম্পায়ারকে পিছনে রেখে বলও প্রায় করে দিচ্ছেন আর নন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যানও তার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন রান নেয়ার পথে একটু এগিয়ে থাকতে। প্রায়ই যা দেখা যায় না তা হলো; ঠিক এ সময়ে বলটা না করে বোলার যদি ঘুরে দাঁড়িয়ে উইকেট ভেঙে দেন এবং ব্যাটসম্যান যদি তখন আর ক্রিজে ফিরে আসতে না পারেন; হয়ে যায় মানক্যাডিং। আদতে যা রান আউট এবং আদি থেকেই যা চির বিতর্কিত।
ক্রিকেটকে বলা হয় ‘ফানি গেম’। আবার ‘গেম অব জেন্টলমেন’ বলেও আদর করা হয় ক্রিকেটকে। কিন্তু মানক্যাডিংয়ের মতো ‘বৈধ তবে ঠিক না’ বিষয়টি সামনে এলে ক্রিকেটকে কেবল মজার খেলাই মনে হয়। ভদ্রলোকের খেলা বলে যে আরেকটা সুখ্যাতি আছে, সেটা পড়ে যায় আড়ালে।

টেস্ট, ওয়ানডে ও স্বীকৃত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মিলিয়ে মোট ১৯ বার মানক্যাডিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর শিকার হওয়া ব্যাটসম্যানরা সিক্ত হয়েছেন অন্যদের সমবেদনায় আর শিকারীরা ভর্ৎসনা পেয়েছেন অগণিত। বিনু মানকড়ের জন্ম দেয়া এই বিতর্কের পক্ষেও অবশ্য অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। ক্রিকেট আইনে বলা আছে বলেই তাদের পক্ষপাতকে ঘৃণা করার সুযোগ নেই। আবার ‘ক্রিকেটীয় সততা’ সামনে এনে যারা সমালোচনা করেন, তাদেরকেও আগুনদৃষ্টিতে দেখার অন্যায়টা করা যায় না।

১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় দুইবার মানক্যাডিং করেন বিনু মানকড়। পরে ডিসমিসালের নামটাই হয়ে যায় তার নামে। দুইবারই তার শিকার হন অজি ওপেনার বিল ব্রাউন। প্রথমবার ছিলো অস্ট্রেলিয়ান একাদশ এবং ভারতীয় একাদশ নামে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচে। দ্বিতীয়বার সিডনি টেস্টে ব্রাউনকে বোকা বানান রাউন্ড দ্যা উইকেটে বোলিং করা মানকড়। পরের দিন প্রকাশিত সংবাদপত্রে বলা হয়েছিলো, ব্রাউনকে প্রস্তুতি ম্যাচের পর মূল টেস্টেও বোকা বানানোর আগে একবার নাকি সতর্কও করেছিলেন মানকড়। কিন্তু ব্রাউন তখনও মানকড়ের ফাঁদে পড়ে না যাওয়ার মতো সতর্ক হতে পারেননি। যখন হলেন, ততক্ষণে মানক্যাডিংয়ের প্রথম শিকারও হয়ে গেছেন তিনি।

মানক্যাডিংয়ের প্রথম নজিরের দিনেই শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। ব্রাউনের আউটের পরপরই সিডনির প্রেসবক্সে বিভক্ত হয়ে পড়েন সাংবাদিকরা। বেশিরভাগই প্রশ্ন তুলে দেন মানকড়ের ক্রিকেট-চেতনা নিয়ে। অনেকে সরাসরি ‘ক্রিমিনাল’ও বলে দেন তাকে। খেলাটা যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ছিলো, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই নাক উঁচু অজিদের কষ্টটাই ছিলো বেশি। সময়ের ভেলায় চড়ে কষ্টটা ছড়িয়ে পড়েছে মানক্যাডিংয়ের শিকার হওয়া ব্যাটসম্যানদের মনেও।

মানক্যাডিং আলোচনায় আসার সর্বশেষ কারণ কিমো পল- ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অলরাউন্ডার। যার একটা মানক্যাডিং চ্যাম্পিয়নই করে দিয়েছে ক্যারিবীয়দের! ঘটনাটা ঘটে গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে। শেষ ওভারে জেতার জন্য জিম্বাবুয়ের দরকার ছিলো তিন রান। শেষ উইকেট নিয়ে ব্যাটিং করছিলো তারা। যে দল জিতবে তারাই উঠে যাবে সুপার লিগে; এমন পরিস্থিতিতে প্রথম বলেই নন-স্ট্রাইকে থাকা রিচার্ড নাগারাবাকে মানক্যাড করে দেন পল।

mankading controversy in cricket by sachitra senanayeke

সঙ্গে সঙ্গেই আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিতর্ক। ক্রিকেটীয়-চেতনা নষ্ট করার দায়ে কাঠগড়ায় তোলা হয় পলকে। আবার অনেকে বিরুদ্ধ স্রোতেও সাঁতরান। তাদের যুক্তি; ১৯ বছরের একজন ক্রিকেটার এসেছেন বিশ্বকাপ খেলতে। তার একটু ‘কৌশলই’ দলকে উঠিয়ে দিতে পারে সুপার লিগে। যা তৈরি করতে পারে আরো বড় কিছুর সম্ভাবনা। এইসব ভেবে সে যদি ‘বেঠিক কিন্তু বৈধ’ কাজটা করেই ফেলেন, তবে তাকে চেতনা-ভঙ্গের জন্য দায়ী করা যায় না। এতেও বিতর্কের আগুনে পানি পড়েনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররাও অবস্থান পক্ষে-বিপক্ষে। গত ৭০ বছরেও শেষ না হওয়া বিতর্ক শুরু হয় নতুন করে।

এখন প্রশ্ন হলো এই বিতর্ক কি চলবেই? নাকি মানক্যাডিং নিয়ে ক্রিকেটের যে নিয়মটা এখন আছে, সেটা মেনে নিয়েই ক্ষান্ত দিতে হবে? এই প্রশ্ন দুটি সামনে রেখে ফিরে যাওয়া যেতে পারে ইতিহাসে। প্রথম মানক্যাডিংয়ের শিকার হওয়া বিল ব্রাউনের অধিনায়ক ছিলেন ডন ব্র্যাডম্যান। তিনি কিন্তু ‘প্রায়’ পক্ষেই ছিলেন মানকড়ের। ক্রিকেট আইনের বৈধতাকেই বড় করে দেখেছিলেন তিনি। সঙ্গে ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করে দেয়ার কারণে ক্রিকেট-চেতনা ভঙ্গ হয়েছে বলেও কিছু উল্লেখ করেননি তিনি। ‘প্রায়’ শব্দটা ব্যবহার করা হলো ওই ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করে দেয়ার বিষয়টি থাকায়। যেটা করার জন্যও আসলে ‘ক্রিকেট-চেতনা’টা বড্ড প্রয়োজন।

মানক্যাডিং নিয়ে ব্র্যাডম্যানের যে অবস্থান ছিলো, সেই অবস্থান এখন আইসিসিরও। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষের সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির প্রধান নির্বাহীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ম্যানক্যাডিং ও ক্রিকেট-চেতনা নিয়ে। তিনি উত্তরে যা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে ব্র্যাডম্যানের কথাটাই তিনি আবার বলছেন। সঙ্গে ব্যাটসম্যানকে এক-আধবার সতর্ক করে দেয়ার বিষয়টি একটু জোর তাগিদ দিয়েই বলেছেন তিনি। সব মিলিয়ে মানক্যাডিং শেষ পর্যন্ত বৈধ কিন্তু না করাই ভালো!

 

আপনি আরো পড়তে পারেন

ছোটদের বিশ্বকাপে বয়স লুকানোর অভিযোগ, আইসিসি নিরুপায়

তামিম-ভক্ত আফ্রিদি-তনয়া

বিসিবির প্রতি আইসিসির কৃতজ্ঞতা

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.