মেসি-রোনালদোর ধরাছোঁয়ার বাইরে যেসব রেকর্ড

রেকর্ড ভাঙা গড়াই কাজ লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। বর্ণিল ক্লাব ক্যারিয়ারে এ মানিকজোড় ভেঙেছেন অসংখ্য রেকর্ড, গড়েছেন নতুন নতুন অনেক ইতিহাস। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে দুজন বরারবরই বিবর্ণ। ফুটবল মহাযজ্ঞে এমনকিছু রেকর্ড আছে যা দুজনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। একনজরে তা দেখে নেওয়া যাক-

লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট: চারটি বিশ্বকাপ খেলে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা পেলে। আসরে নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন দশটি। বিশ্বের আর কোনো ফুটবলারের এতগুলো অ্যাসিস্টের রেকর্ড নেই। নিজের প্রথম তিন বিশ্বকাপে (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬) সালে তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন পেলে।

পরের বিশ্বকাপে রেকর্ড সাতটি অ্যাসিস্ট রয়েছে তার। লিওনেল মেসি চারটি বিশ্বকাপ খেলে পাঁচটিতে অ্যাসিস্ট করেছেন। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ম্যাচ খেলেছেন ১৯টি। তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ১৭টি ম্যাচে দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন। দুজনের জন্যই বিশ্বকাপে পেলের গড়া সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের রেকর্ড ভাঙা প্রায় অসম্ভব।

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ আসরে নেতৃত্ব: বিশ্বকাপের ইতিহাসে টানা পাঁচটি আসরে কোনো দলকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার রাফায়েল মার্কেজ। ২০০২ সালে প্রথমবার মাত্র ২৩ বছর বয়সে মেক্সিকোর অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। নেতৃত্ব তো দূরের কথা, শুধু খেলোয়াড় ভূমিকায় পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার নজির বিরল। মার্কেজের আগে মাত্র দুজন পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলতে পেরেছেন।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলতে পারলে মেসি ও রোনালদো দুজনই মার্কেজদের রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারবেন। কিন্তু অধিনায়ক মার্কেজের রেকর্ড ছোঁয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব। কারণ মেসি যেখানে দুটি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেখানে তিনটি আসরে পর্তুগালের অধিনায়ক ছিলেন রোনালদো। মার্কোজকে ছুঁতে হলে অধিনায়ক রোনালদোকে খেলতে হবে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। যা কার্যত অসম্ভব।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে কমবয়সী গোলদাতা: ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ফুটবল দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিলেন পেলে। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে গোল করেন তৎকালীন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন। কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিরুদ্ধে গোল করেন ১৭ বছর ২৩৯ দিন বয়সী পেলে। সেমিফাইনালে তিনি করেন হ্যাটট্রিক। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ গোল ও হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। মেসি-রোনালদো দুজনই ইতোমধ্যে বয়স ত্রিশ ছাড়িয়েছেন। তাই পেলের রেকর্ড তাদের পক্ষে ভাঙা অসম্ভব।

২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়া অ্যান্ড মন্টিনিগ্রোর বিরুদ্ধে প্রথম গোল করেছিলেন ১৯ বছর বয়সী মেসি। যা আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে গোলের রেকর্ড এবং সার্বজনিন ষষ্ঠ রেকর্ড। একই বিশ্বকাপে প্রথমবার গোল পান ২১ বছর বয়সী রোনালদো। ইরানের বিরুদ্ধে গ্রুপপর্বের ‍দ্বিতীয় ম্যাচে পেনাল্টি থেকে স্বপ্নের গোলটি করেন পর্তুগিজ যুবরাজ।

বিশ্বকাপে সেরা ফিনিশিং: অন্তত দুবার বিশ্বকাপে ফিনিশিং করা ফুটবলার মাত্র ছয়জন আছেন। তন্মধ্যে ব্রাজিলের চারজন তথা নিলটন সান্তোস, পেলে, কাফু ও রোনালদো নাজারিও। দুজন আছেন পশ্চিম জার্মানির- পিয়েরি লিট্টবার্স্কি এবং লোথার ম্যাথুস। দুবার তো দূরের কথা মেসি-রোনালদো এক আসরেও ফিনিশিং দিতে পারেননি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে যায় মেসির আর্জেন্টিনা। ওদিকে ২০০৬ সালে পর্তুগালের হয়ে সেমিফাইনালে ওঠাটা রোনালদোর সর্বোচ্চ সাফল্য।

সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়: ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে এ পর্যন্ত ৪৪৫ জন ফুটবলার স্বপ্নের সোনালি ট্রফিজয়ের স্বাদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন ফুটবলারের দুবার বিশ্বজয়ের নজির আছে। এদের মধ্যে মাত্র একজনই সর্বোচ্চ তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। তিনি পেলে। বিশ্বের আর কোনো ফুটবলারের হ্যাটট্রিক ট্রফি জয়ের রেকর্ড নেই। তার এই রেকর্ড ভাঙতে পারবেন না মেসি-রোনালদো। তিনটি ট্রফি তো দূরের কথা, একটিও জিততে পারেননি এই দুজন!