ঢাকা লিগ: কোনো ক্লাবের নেই ব্রান্ডিং, নেই ওয়েবসাইট!

এ মাসের ২২ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এবারের লিগে অংশগ্রহণ করছে ১২টি ক্লাব। লিস্ট-এ পর্যায়ের এই লিগকেই ধরা হয় স্থানীয় ক্রিকেটারদের জাতীয় দলের সিঁড়ি। অথচ এই লিগের ক্লাবগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় বড় দলের সঙ্গে পাল্লা দিলেও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের অবস্থা হাস্যকর বললেও কম বলা হয়।

লিগের ১২টি দল এর মধ্যেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন করছে কয়েকটি দল। একটি দল অনুশীলন ক্যাম্প গড়েছে বিকেএসপিতে। ঢাকার অন্যান্য জায়গায় আছে বাকি দলগুলো। গতকাল মিরপুরে গিয়ে দেখা গেলো অনুশীলনে ব্যস্ত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্র। কোনটা কোন দল, তা বুঝতে হলো খেলোয়াড়দের দেখে! কারো গায়ে পাঁচ বছর আগের জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সি। কারো দুই বছর আগের। কেউ আবার কোনো ফুটবল ক্লাবের জার্সি পড়ে এসেছেন! কিটস ব্যাগগুলোতে নেই কোনো ব্রান্ডিংয়ের ছোঁয়া। যে যার মতো যা আছে, তা নিয়েই চলে এসেছেন অনুশীলনে।

পেশাদার ক্রিকেট জগতে বাংলাদেশের পথ অনেক দীর্ঘ হলেও স্থানীয় ক্লাবগুলোর অবস্থা এমনই। মোহামেডান দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। এই দলে এবার ব্যাটিং কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন আফতাব আহমেদ। গতকাল তাকে অনুশীলনে দেখা গেলো, তিনি যখন জাতীয় দলে ছিলেন, সেই সময়ের অনুশীলনের পোশাক পড়া! যাতে এখনো দেখা যাচ্ছে গ্রামীনফোনের লোগো! আরো বেদনার ব্যাপার হলো, লিগের একটা আনুষ্ঠানিক লোগো এখনো সরবারহ করেনি বিসিবি। অথচ লিগ নিয়ে প্রতিদিনই কতো কতো খবর হচ্ছে।

কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের অনুশীলনে মাশরাফি এসেছেন জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সি পড়ে। আব্দুর রাজ্জাকের গায়ে আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের জার্সি। সব মিলিয়ে পুরোপুরি জগাখিচুরি অবস্থা ক্লাবগুলোর ব্রান্ডিংয়ে। অথচ এই যুগে একটা চায়ের দোকানেরও ব্রান্ডিং হয়। মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য, চমক দেখানোর জন্য একটা পানের দোকানদারও নতুন কিছু ভেব দেখে।

আরো আশ্চর্য বিষয় হলো ক্লাবগুলোর বিশেষায়িত কোনো ওয়েবসাইট নেই। গুগলে সার্চ করে আবাহনীর কোনো ওয়েবসাইটই পাওয়া যায়নি। বিদেশের কোনো মানুষ যদি বাংলাদেশের ক্লাব ক্রিকেট সম্পর্কে জানতে চায়, তবে তার ভরসা হবে কেবল উইকিপিডিয়ার পাতাগুলো। সেখানেও তথ্য উপাত্ত খুবই কম। আবাহনীর না থাকলেও মোহামেডানের একটা ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া গেলো বটে, তবে সেটার কার্যকরিতাও নেই বললেই চলে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ক্লাবগুলোর অফিসিয়াল কোনো পেজের অস্তিত্ব নেই। একেবারে যে নেই, তা নয়। আছে, তবে সেগুলো হয়তো সমর্থকদের তৈরি, নয়তো কেউ এমনিই ভুল করে বানিয়ে রেখেছে! পেজগুলোর কার্যক্রম দেখে এর চেয়ে বেশি কিছু ধারণা করা কঠিন। 

একটা সময় আবাহনী- মোহামেডান বলতে পাগল ছিলেন সমর্থকরা। তাদের কেউ যদি এখন প্রিয় দলের একটা জার্সি কিনতে যান, নিশ্চিতভাবেই পাবেন না। অথচ বিপিএলের মতো নতুন একটা আসরের সময়ও কতো আয়োজন করে দলগুলোর ব্রান্ডিং করেন মালিকরা। এ বিষয় তুলে ধরায়, কদিন আগে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান গাজী গোলাম মোর্তজা বললেন, ‘ক্লাবগুলো কেনো বিনিয়োগ করবে, তারা তো কিছু পায় না।’ বিনিয়োগ না করে কবে কারা কী পেয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি।

অথচ একটু ভালো ইচ্ছা থাকলেই ঢাকা লিগকে বিপিএলের মতোই আলোচনায় আনা যায়। কিন্তু উদ্যোগ নেয়ারই কেউ নেই। খেলোয়াড়দের মধ্যেও যেনো এই লিগ নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। থাকবেই বা কীভাবে, ক্লাবগুলোরই যে সৃষ্টিশীল আধুনিক উদ্যোগ নেই। ব্রান্ড হয়ে উঠার উচ্চাভিলাষ নেই। এমন একটা নিষ্প্রাণ লিগ আসলে কীভাবে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি করবে? কে জানে!

আপনি আরো পড়তে পারেন

মুস্তাফিজ ও একটি ইয়র্কারের গল্প

মুস্তাফিজ ভালো খেললেও হার হায়দরাবাদের

মাঠে মারপিট: আজীবন নিষিদ্ধ বরিশাল বুলসের মালিক

আশা পূরণ হলো মুস্তাফিজের