আপনি পড়ছেন

মাত্র চার ক্লাশ পর্যন্ত পড়েছেন। ১০ বছর বয়সে বিয়ে হয় ৩০ বছর বয়সী এক লোকের সঙ্গে। ১৯ বছর বয়সে হন ৩ সন্তানের জননী। চতুর্থ সন্তান যখন আসি আসি করছে, তখন একদিন যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্মম প্রহারে মূর্ছা যান। মৃত ভেবে স্বামী গোয়ালঘরে ফেলে চলে যায়। সেখানেই কন্যা সন্তান প্রসব করেন তিনি। অন্ধকারে হাতড়ে পাওয়া পাথরের টুকরো দিয়ে নিজেই কাটেন নিজের নাড়ি। ভারতের মহারাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এই নারীর নাম সিন্ধুতাই সাপাকাল। তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প অনায়াসেই হার মানাবে যে কোনো সিনেমাকে।

sindhutai sakpal oneসিন্ধুতাই সাপাকাল, যিনি হাজার অনাথের মা

ক্ষুধার তাড়নায় সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে নিয়ে অবস্থান নেন শ্মশানে। মৃতদেহ পোড়ানোর পর কিছু খাবার ছিটিয়ে দেওয়া হতো, সেসব কুড়িয়ে খেতেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! ক্ষুধার যন্ত্রণায় একদিন রেললাইনে শুয়ে পড়লেন। অনেক অপেক্ষার পরও ট্রেন আসে না, কারণ সেদিন ছিল রেল ধর্মঘট। এই ভেবে নিজেকে অভিশাপ দিলেন সিন্ধুতাই, তার কপালে যে মৃত্যুও লেখা নেই!

তীব্র ক্ষুধা নিয়ে রেললাইনের পাশে বসে আছেন একদিন। সিন্ধুতাই দেখলেন, মূল গাছ থেকে প্রায় ভেঙে পড়া একটি ডালে নতুন করে পাতা-ফুল গজিয়েছে। কেন জানি বিষয়টা তাকে খুব নাড়া দিল। তিনি ভাবলেন, ভেঙে পড়া ডালে যদি নতুন জীবন আসতে পারে তবে আমি কি আবার জীবনে ফিরতে পারি না। ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন সিন্ধুতাই সাপাকাল। ওই গাছের মতো নতুন করে ফুল ফোটাতে চান তিনি। রেললাইনে গান গেয়ে ভিক্ষা শুরু করলেন।

একদিনের ঘটনা। রেল স্টেশনে একটি টাকা ভর্তি একটি ব্রিফকেস কুড়িয়ে পেলেন। প্রচণ্ড ক্ষুধাও সিন্ধুতাইকে অসৎ করতে পারেনি। রেল মাস্টারের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হল টাকার মালিককে। মালিক খুশি হয়ে কিছু টাকা দিতে চাইলেন। সিন্ধুতাইয়ের আবদার, একটা ছোট ঘর করে দিন, বাচ্চাগুলোকে নিয়ে রাতে ঘুমাতে পারিনা। রেলস্টেশনের পাশেই ছোট্ট একটি ঘর উঠল। সারাদিন ভিক্ষা করে রাতে এসে সন্তানদের মুখে দু-মুঠো খাবার তুলে দেন। সঙ্গে থাকে রেলস্টেশনে পড়ে থাকা আরো কিছু শিশু।

sindhutai sakpal threeসিন্ধুতাই যখন শিক্ষক

শিশুদের প্রতি তার এই মমতা দেখে এগিয়ে এলেন অন্যরাও। ঘর বড় হল, একটি থেকে একাধিক হল। নিজের এবং কুড়িয়ে পাওয়া অন্যান্য বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করালেন। লোকেদের সাহায্য বাড়তে লাগলো। তিনিও অক্লান্ত পরিশ্রম করে শিশুদের বড় করে তুলছেন। সিন্ধুতাইয়ের সন্তান বাড়তে বাড়তে হাজার ছাড়িয়ে গেল! তৈরি হল মোট ছয়টি এতিমখানা- তিনটি ছেলেদের, তিনটি মেয়েদের।

তারপর দিন যায়, মাস যায়, একটার পর একটা বছরও শেষ হয়। সিন্ধুতাই হয়ে ওঠেন প্রায় দেড় হাজার অনাথের মা। তার এতিমখানা থেকে বেরুনো অনেক সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতজুড়ে। তাদের সবার মা সিন্ধুতাই সাপাকাল। এক বিভীষিকাময় দিনে নিজের যে মেয়ে গোয়ালঘরে জন্মেছিল সেই মমতাও এখন ভারতের নামকরা ডাক্তার।

sindhutai sakpal twoবড় হয়ে সন্তানরা দেখা করতে এসেছেন মায়ের সঙ্গে

গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু স্রষ্টা যে সেটা চাননি!

সিন্ধুতাইয়ের এতিমখানায় একদিন বয়োঃবৃদ্ধ এক লোক এসে একটু খাবার চাইল। পরম যত্নে খাবার দিয়ে ক্লান্ত লোকটিকে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিলেন। লোকটি সিন্ধুতাইকে চিনল না। চেনার কথাও নয়, কারণ সে ভীষণ অসুস্থ। সিন্ধুতাই বললেন, একদিন তুমি যৌতুকের জন্য যে মেয়েটিতে মেরে গোয়ালঘরে ফেলে দিয়েছিলে, আমি সেই মেয়ে। পাশে বসা ডাক্তারকে দেখিয়ে বললেন, এটা তোমার মেয়ে মমতা, গোয়ালঘরে যার জন্ম হয়েছিল!

সিন্ধুতাই সাপাকাল অনেকগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১০ সালে তার জীবনের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক অনন্ত মহাদেবন।

করোনার এই দুঃসময়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিন্ধুতাই সাপাকাল- আমার এলাকায় একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না। ছয় ছয়টি এতিমখানা সামলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর সিন্ধুতাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তার হাজার হাজার সন্তানেরা।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.