মসজিদে হামলা: প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও সুপারিশ

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তদন্তে দেশটির সরকার গঠিত রয়েল কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে এটি প্রকাশ করা হয়, যাতে বহু পরামর্শ ও সুপারিশ দেয়া হয়েছে।

হামলাস্থল নূর মসজিদের এখনকার চিত্র

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী চাইলেও ভয়াবহ এই আকস্মিক হামলা রোধ করতে পারতো না। যা ঘটেছে, তাতে সংস্থাগুলোর কোনো গাফিলতি প্রতীয়মান হয়নি।

হামলাকারীর বিষয়ে বলা হয়েছে, বাবার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা এই ব্যক্তি বিশ্ব ভ্রমণে নেমে নিউজিল্যান্ডে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগ্র কথা বললেও সন্দেহ করার মতো কিছু ঘটাননি। তাছাড়া কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনে যুক্ত নন, জঙ্গিবাদী মতবাদও প্রচার করেননি তিনি।

এসব কারণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষে হামলার আগাম তথ্য সংগ্রহ করা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে হামলা ঠেকানো সম্ভব ছিল না। তাই গোয়েন্দা সংস্থা বা নিয়মিত বাহিনীকে দোষী করা যাচ্ছে না।

হামলার পর আতঙ্কিত মুসলিমরা

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, ৮০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ প্রতিবেদনে ‘বহু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ’ তুলে ধরেছে রয়্যাল কমিশন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ বন্ধে দেশটির বিদ্যমান আইনে আরো কিছু পরিবর্তন আনা। এ ক্ষেত্রে ৪৪টি আইন ও প্রশাসনিক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া হামলাকারী যেভাবে অস্ত্র কিনেছে, তা রোধ করা সম্ভব ছিল। এক গেমিং ফ্রেন্ডের মাধ্যমে দেশটিতে থাকা এবং ওই বন্ধু ও তার বাবার কাছ থেকে চারিত্রিক সনদ নিয়ে বন্দুক কেনেন তিনি। এ জন্য আগ্নেয়াস্ত্র আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা এবং প্রক্রিয়াটি আরো কঠোর করা উচিত।

প্রতিবেদনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ইউটিউবে নজরদারি বাড়ানো, উগ্র মতামত প্রকাশকারীদের নজরে রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্দার্ন

এ প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন বলেন, প্রতিটি পরামর্শ ও সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করা হবে। কমিশনের রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, ওই হামলায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রতিবেদনটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা এড়াতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক, সক্রিয় হোক।

প্রতিবেদনটিতে নিউজিল্যান্ড ছাড়াও ইংল্যান্ড, নরওয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার রয়েছে। আরো রয়েছে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তা, মুসলিম নেতা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার।

পর হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট

গত বছর ১৫ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। হতাহতদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি থাকলেও অল্পের জন্য রক্ষা পান দেশটি সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে এমন বর্বর হামলা চালায় আধিপত্যবাদী শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। গ্রেপ্তারের পর তাকে ওই ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি করে নিউজিল্যান্ড সরকার। হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় চলতি বছরের গত আগস্টে ট্যারেন্টকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন স্থানীয় একটি আদালত।