দেশের কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস)। সংগঠনটির ২০১৬-১৯ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৫ জুন, শনিবার। নির্বাচনে পরিচালক পদে ২ টি প্যানেল থেকে মোট ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্যানেলের বাইরেও নির্বাচনে ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। মোট ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ড্রিম৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী রাশাদ কবির। ২৪ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখাতে নয় বরং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান।

rashad kabir

প্রশ্ন: আপনার প্রতিষ্ঠান এবং পথচলার গল্প...

উত্তর: আমি সবসময় দেশের জন্য কিছু করতে চাইতাম। আইসিটি সেক্টরে বরাবরই আমার ব্যাপক আগ্রহ। ১৯৭১ আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্যে আমার অন্যরকম একটা আবেগ কাজ করে, তাই আমার কোম্পানির নামও রেখেছি ড্রিম৭১। লোগোতে ব্যবহার করা হয়েছে লাল-সবুজ রঙ। যা পতাকার রঙ্গে মিলিয়ে করা হয়েছে। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ড্রিম৭১-এর যাত্রা শুরু। এরপর শুধুুই এগিয়ে চলা। আমার স্বপ্ন আর পরিশ্রমই আমার সফলতার মূল নিয়ামক। এদেশের তরুণদের আইসিটি সেক্টরে অপরিসীম আগ্রহ। প্রতিটি তরুণই সম্ভাবনাময়। এই তরুণদের নিয়ে কাজ করলে আইসিটি সেক্টরে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাবো।

প্রশ্ন : 'ড্রিম৭১'-এর স্বপ্ন নিয়ে বলুন, কি কি কাজ করছে ড্রিম ৭১

উত্তর :  আমরা আর স্বপ্ন দেখাতে চাই না, আমরা স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর। আর আমাদের যাত্রাপথ সাজাতে চাই অসংখ্য সাফল্যগাঁথার গল্প দিয়ে। ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড শুধু দেশে নয় বিশ্ব বাজারেও প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। একদল পরিশ্রমী যুবক প্রতিনিয়ত কাজ করছে আমাদের সঙ্গে।

ড্রিম৭১ মোবাইল অ্যাপস, ওয়েব অ্যাপস এবং মোবাইল গেমস নিয়ে জন্ম থেকেই কাজ করছে। সম্প্রতি এটুআই এর সঙ্গে যৌথভাবে 'বিজ্ঞানের রাজ্যে' নামে একটি গেমস তৈরি হচ্ছে। এটাই বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র এডুকেশনাল গেমস। গেমসটি ক্লাস সিক্স, সেভেন ও ক্লাস এইটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। এখন পর্যন্ত ড্রিম৭১-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপস ‘ক্রিকেট বাংলাদেশ’। লাইভ স্কোর আপডেট এবং খেলাধুলার খবরসহ সবকিছুই থাকছে এতে। অ্যাপসটি গুগল প্লে-স্টোর থেকে ৫ লক্ষাধিকবার ডাউনলোড হয়েছে।

প্রশ্ন: সন্দেহ নেই আইসিটি সেক্টর একটি সম্ভবনাময় খাত, তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় কেমন করছে বাংলাদেশ?

উত্তর: বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর নিয়ে বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে ২০০৮ সালে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা করলেন। এসময় থেকেই মূলত আইসিটি সেক্টরে সুবাতাস বইতে শুরু করলো। অনেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা শুনে হাসাহাসি করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়।

প্রতিবছরই এই সেক্টর ভালো করছে। ২০০৯ সালে আইসিটি খাত থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে সেটা ৩০০ মিলিয়ন ডলার। আমাদের সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৮ সালে আয় গিয়ে দাঁড়াবি ১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালে সেটা হবে ৫ বিলিয়ন ডলার।

আইটি সেক্টরে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। আইটি সেক্টরে শীর্ষে পৌছাবে এমন ৩০ টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছেন গার্টনার। অন্যদিকে, কেপিএমজি আউটসোর্সিংয়ে সফল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছেন উপরের সারিতে। বিশ্বব্যাংক সম্ভাবনাময় ১৭ টি দেশের আইসিটি সেক্টরে লগ্নি করার কথা ভাবছে। সেখানেও রয়েছে বাংলাদেশ। শেষ তিনবার ডব্লিউএসআইএস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি আমরা।

rashad kabir dream 71

প্রশ্ন: ইন্টারনেট ছড়িয়ে গেছে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে। তরুণদেরও প্রযুক্তিপণ্য কিংবা ইন্টারনেটে ব্যাপক আগ্রহ। আপনি কি বলবেন?

উত্তর: আইসিটি সেক্টরে ক্রমাগত উন্নতি করছে বাংলাদেশ। দেশের এই অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এ প্রজন্মের তরুণরা। তরুণদের এই সাফল্যগাঁথাই এই সেক্টরে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখায়। আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাহিদা মাফিক কাজে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। দেশের আইসিটি মার্কেটের অবস্থা ভালো। আমার বিশ্বাস কমিটমেন্ট আর কোয়ালিটি ঠিক থাকলে যেকোন দেশের চাইতে ভালো করা সম্ভব। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারের ব্যবহার ছড়িয়েছে। মোবাইলের গ্রাহক কয়েক কোটি। কাজেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে।

প্রশ্ন : বাত পোহালেই বেসিস নির্বাচন। আপনি পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রার্থীদের মধ্যে আপনি সবকনিষ্ঠ। কোন প্যানেলে না গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থীতা করছেন। যদি ভোটাররা আপনাকে নির্বাচিত করেন তাহলে এই সেক্টরের জন্য কি করবেন?

উত্তর : অনেকে বলছেন আমার ‘অভিজ্ঞতা কম’। তবে আমি বলবো অভিজ্ঞতা হয় মূলত কাজ দিয়ে, বয়স দিয়ে নয়। একটি কথা প্রচলিত আছে, যার হয় তার নয়েই হয়, আর যার হয় না আর নব্বইতেও হয় না। স্বল্প সময়ে আমি আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক কাজ করার চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য ভালো কিছু করার মনোবাসনা আমার রয়েছে। বর্তমানে চারদিকে তারুণ্যের জয়জয়কার। তারুণ্যের প্রাণশক্তিতে ভর করে সকলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। বেসিস-এ তরুণদের সম্পৃক্ততা খুব জরুরি। পরিকল্পনা প্রণয়নে উচ্চ পর্যায়ের সদস্যরা থাকলেও তরুণদের জন্য আরো সুন্দর সাপোর্ট প্রয়োজন। আমি নির্বাচিত হলে, প্রবীণ ও তরুণদের মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে চাই।

আইসিটি খাতকে আমি ২ ভাগে দেখি এক. সার্ভিস দুই. প্রোডাক্ট তৈরি। শুধু সার্ভিস দিলেই চলবে না,বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের ভালো প্রোডাক্টও তৈরি করতে হবে। মার্কেটিংয়ের বিষয়েও দিতে হবে বিশেষ গুরুত্ব। বাংলাদেশে ১ হাজারের বেশি সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে। কিন্ত দক্ষ আইটি মার্কেটিং এবং সেলস প্রফেসনালস ২০০ও হবে না । আইটি ডেভেলপারদের সঙ্গে আইটি মার্কেটিং এবং সেলস প্রফেসনালসদের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। আমি নিবাচিত হলে সকলের অংশগ্রহণে,সবার সুচিন্তিত মতামত নিয়ে স্বমন্বিতভাবে দেশের আইটি সেক্টরে অবদান রাখার চেষ্টা করবো। বর্তমানে দেশে ৬ কোটি ২০ লাখ ইন্টারনেট গ্রহাক রয়েছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। বেসিসকে নবীন এবং প্রবীণদের মিলনক্ষেত্র করে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে চাই।

আমি বিশ্বাস করি, আমার মত বয়সী তরূণদের স্বপ্ন দেখার দিন শেষ,এখন সময় স্বপ্ন বাস্তবায়নের। বেসিস নির্বাচনে যদি নির্বাচিত হতে পারি,তাহলে বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি সেটা হয়তো আরো সহজতর হবে। কিন্ত যদি নির্বাচিত না হতে পারি, আমি একটুও হতাশ হবো না । হতাশ হওয়া তরুণদের কাজ নয়। বাংলাদেশে আর বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি, ইনশাল্লাহ সেটা বাস্তবায়ন করবোই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ থেকেই তৈরি হবে ভবিষ্যত ফেসবুক, গুগল কিংবা লিঙ্কডিনের মতো বিশ্বমানের প্রোডাক্ট ।

আপনি আরো পড়তে পারেন

ইনস্টাগ্রাম এখন ৫০ কোটির পরিবার

উইন্ডোজে এলো ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যাপ

সবচেয়ে বাজে ব্রাউজার গুগল ক্রোম!

শরীরের দুর্গন্ধের খবর জানাবে অ্যাপ

গাঁজা বাণিজ্যে সহায়তা দিতে যাচ্ছে মাইক্রোসফট!

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.