মেসি যেনো চিরদুঃখী এক রাজপুত্র

যে ঝলক তিনি দেখান, অন্যেরাও তা পারেন। কিন্তু কল্পনায়। যে ক্ষমতা তার কাছে তেমন কিছুই না, সেটা অন্যদের কাছেও কিছু না। কিন্তু ভাবনার রাজ্যে, বাস্তবে নয়। তিনি মেসি। লিওনেল মেসি। সময় যাকে চিনিয়ে দিলো ফুটবলের চিরদুঃখী রাজপুত্র হিসেবে।

লা লিগা জেতা তার কাছে নিত্যদিনের বাসার কাজের মতো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জেতা হয়েছে। কোপা দেল রেও দিয়েছে ধরা। কিন্তু আকাশী সাদা বা নীল জার্সিতে মেসি বড় দুঃখী। ঝলকে ঝলকে নিজেকে ছাড়িয়ে যান ঠিকই, কিন্তু আলো কেড়ে নেয় প্রতিপক্ষ। মেসি বারবার হয়ে যান দুঃখী রাজপুত্র।

ফিফার বর্ষসেরার পুরস্কারটাকে প্রায় বানিয়ে ফেলেছেন নিজের একক সম্পত্তি। সমকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে তাকে নিয়ে বিতর্ক নেই। বিতর্ক নেই? একটু বোধহয় আছে। মেসি জাতীয় দলের কিছু জিততে পারেননি, এমন কি একটা কোপাও না; বিতর্কটা এখানেই।

টানা তিনবার সুযোগ এলো মেসির সামনে। ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রায় একক প্রচেষ্টায় দলকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। বিশ্বকাপ মঞ্চে মেসি গাইবেন বিজয়ের গান, এমন স্বপ্নে বিভোর হলো বিশ্ব। মারাকানায় উৎসবের পূর্বপ্রস্তুতিও সম্পন্ন হলো। কিন্তু সেই উৎসব হিগুইয়েনরা তুলে দিলেন জার্মানির হাতে।

এরপর কোপায় আবার মেসির জন্য উৎসবের আয়োজন। আবার মেসির জন্য রচিত হলো বিজয়ের গান। কিন্তু সেই গান কণ্ঠে তুলতে পারলেন না মেসি। টাইব্রেকারের দুঃখে ভাসতে হলো তাকে। অপেক্ষায় বসতে হলো আবার।

২০১৬ সালের শতবর্ষী কোপাটা আর্জেন্টিনা শুরু করলো জয়ের এক ও একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে। একের পর এক প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালেও উঠে গেলেন মেসিরা। গত আসরে যাদের কাছে টাইব্রেকার দুঃখে পোড়া, এবারও তারই ফাইনালের প্রতিপক্ষ।

গ্রুপ পর্বে সেই চিলিকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে শুরু। ফাইনালে সেই স্মৃতিটা কি মনে পড়ছিলো না মেসির? পড়ছিলো নিশ্চয়। সেই স্মৃতি নিয়েই হয়তো অন্তত একটা ট্রফির জন্য বড় কাতর হয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু ইতিহাস বুঝলো না তা। ইতিহাস বঞ্চিত হলো মেসির হাতে ট্রফি তুলে দেয়ার সুযোগ থেকে।

আবারও সেই টাইব্রেকার। আবারও স্বপ্ন ভঙ্গের দুঃসহ যন্ত্রণার গল্প। মেসির অন্তহীন অপেক্ষা আর শেষ হলো না। টানা ১২০ মিনিট খেলে প্রথম পেনাল্টিটা নিতে গেলেন তিনি। প্রমাণ করে দিলেন, তিনিও মানুষ। পাহাড়সমান চাপ, তাকেও চিরেচ্যাপ্টা করে দেয়। পেনাল্টি মিস করে বসলেন মেসি। কোপার ট্রফিটা আর্জেন্টিনার হাত থেকে ফসকে তখনই। সেটা আর ধরা দিলো না। মেসির হাতে আর হয়তো কোনোদিনই দিবে না। অবসরই যে ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি।

ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে আরো একবার যথাযথ সম্মান দিতে পারলো না সময়। হিগুইয়েন- আগুয়েরোদের গোলবার চিনতে না পারার যুগে মেসি শূন্যহাতে ফিরলেন। তার চোখ বেরিয়ে জল গড়ালো। আহা মেসি! আহা ফুটবলের চিরদুঃখী রাজপুত্র!

আপনি আরো পড়তে পারেন

আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন মেসি

২৩ বছরেও হলো না, আবার হার আর্জেন্টিনার

টাইব্রেকারে কোপার ফাইনাল

গোল শূন্য ফুলটাইম, অতিরিক্ত সময়ে কোপা ফাইনাল

স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় মেসির আর্জেন্টিনা