সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা কি আরও বাড়বে?

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় করা ‘নো ক্রাইম, নো কিলিং’ মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের অধিকারকর্মীরা। এ সংক্রান্ত একটি খবর মঙ্গলবার তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিতে প্রকাশিত হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

খবরে বলা হয়, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে (বিএসএফ)। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডে ‘চোখ বন্ধ করে রাখায়’ নয়াদিল্লিকে অভিযুক্ত করে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের সময় সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে বলেন, অপরাধের কারণে এসব হত্যার ঘটনা ঘটছে।

অপরাধের ধরন উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘নো ক্রাইম, নো ডেথ অন দ্য বর্ডার’।

আনাদোলু এজেন্সিকে অধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, নয়াদিল্লির ‘নো ক্রাইম, নো কিলিং’ পলিসি দৃশ্যত আগের অবস্থান থেকে ভারতের সরে আসাকে নির্দেশিত করছে। ‘এর আগে সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা (ভারত) অনুশোচনা করতেন। অনেকবার সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।’

সীমান্ত হত্যা নিয়ে জয়শঙ্করের ‘বেআইনি’ মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে আবরার বলেন, ‘এর অর্থ হলো, এই বেআইনি অনুশীলনে তাদের (ভারতের) অবস্থান নেতিবাচক গতিপথ নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী যা করছে, যুদ্ধক্ষেত্রেও এ রকম বেপরোয়া মারণাস্ত্রের ব্যবহার হয় না।’

আনাদোলু এ নিয়ে কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। ইসমাইল বলেন, ‘নিরস্ত্র লোকজনের ওপর অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে একজন মন্ত্রী কীভাবে বলতে পারেন ‘নো ক্রাইম, নো কিলিং’। ভারতীয় সীমান্তবাহিনী এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশ গরু ব্যবসায়ী অথবা দুই দশক ধরে সীমান্ত এলাকায় বসবাস করছেন।’

হোসাইন বলেন, ‘গরু পাচার কিংবা আন্তঃসীমান্ত যে কোনো অপরাধের জন্য বিচারবহির্ভূতভাবে কাউকে হত্যা করা যায় না।’

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশফিকা নওরিন আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘খোঁড়া যুক্তিতে বাংলাদেশি হত্যা ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ইস্যুটি আমাদের আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়া উচিত।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২০ সালে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের হাতে অন্তত ৪৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নিরস্ত্র ছিল। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীগুলো মোট ১ হাজার ১৮৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে।