ভারত-মিয়ানমারের বিকল্প এখন বাংলাদেশ!

প্রাণঘাতী করোনার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত ভারত আর রাজনৈতিক সংকটে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ​মিয়ানমার। এমতাবস্থায় তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে তৈরি পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এতদিন প্রতিবেশী দেশ দুটিতে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড ক্রয়াদেশ দিয়ে আসছে, তারা এখন বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে।

বলা হচ্ছে, করোনা ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এই অঞ্চলের অনেক দেশের চেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ সচল রাখতে কম দামে উৎপাদন এবং নিরাপদ উৎপাদক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এদেশ।

অবশ্য, এর প্রমাণও মিলেছে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ঢাকার রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

করোনাকালে কতটা বেড়ে রপ্তানি?

মার্চ নাগাদ রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে দেশের বার্ষিক রপ্তানি। এপ্রিলেও রপ্তানি পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে পণ্য চালানের আয়।

এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, করোনাকালীন লকডাউন এরইমধ্যে শিথিল হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। যার প্রভাবে তিন মাস আগের তুলনায় এসব দেশের অর্থনীতি ফের চালু হয়েছে।

তাতে পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি পোশাকের চালান পুনরুদ্ধার হচ্ছে, যা গত কয়েক মাসে বেগবান করেছে ঢাকার রপ্তানি আয়। বছরে ৬ গুণ বেড়ে তা গত মাসে পৌঁছে গেছে ৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে।

চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে গার্মেন্টস খাতে রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার এসেছে নিটওয়্যার আইটেম থেকে।

এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। জুলাই-এপ্রিলে এ খাতের আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর ফলে বার্ষিক রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬০ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের একাধিক ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতা বলছেন, ভারত-মিয়ানমার থেকে ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার পরিসংখ্যানটা দিনকে দিন বাড়ছে। এর প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদী, যার সুফল পাবে উভয় পক্ষ।

ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানও। তবে তা দেশের পোশাক খাতে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি রুবানা হক জানান, গেল বছরের চেয়ে গত ১৫ দিনে দেশের রপ্তানি আয় কমেছে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। সামগ্রিকভাবে পোশাক শিল্প খাত পুনরুদ্ধার হয়েছে, তা মনে করেন না তিনি।