পররাষ্ট্রমন্ত্রী: দ্বি-রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়

সম্প্রতি বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দদ্বয় বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই পাসপোর্ট দিয়ে এখন ইসরায়েল ভ্রমণে কোনো বাধা নেই। বিষয়টি নিয়ে জনমনে গুঞ্জন চলছে যে, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ফাইল ছবি

তবে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিষয়টি (গুঞ্জন) সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি আজ রোববার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ইসরায়েলেরর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছে না বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে আমাদের আগের যে অবস্থান, আমরা সে অবস্থানেই আছি। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না।’

প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ চার্টার অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র (ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল) নীতিতে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। অতীতে এবং বিশেষ করে, সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময়ও বাংলাদেশ জোর দিয়ে এই নীতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।

পার্সপোর্ট সংশোধনের বিষয়ে এদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টা এমন নয় যে, আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়াচ্ছি। বরং যেটা হয়েছে, তা হলো- আমাদের পাসপোর্টে আগে একটা আলাদা সিল লাগানো ছিল ‘ইসরায়েল ব্যতীত’। দুনিয়ার অন্য কোনো পাসপোর্টে এ রকম নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাসপোর্টটা ইউনিক ছিল, আর সে কারণেই এটা (সিল) সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ডাইজড করার জন্য শুধু আমরা সিলটা বাদ দিয়েছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, এই সংশোধনী আনার উদ্দেশ্য হলো পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা। তবে পাসপোর্টে সংশোধনী আনা হলেও ইসরায়েলের ব্যাপারে আমাদের পররাষ্ট্র নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গিলার্ড কোহেনের টুইটার পোস্টের সঙ্গে বাংলাদেশের পাসপোর্টের সংশোধনের আগের ও পরের কপি

এদিকে, সম্প্রতি সংশোধন করে বাংলাদেশ সরকার নতুন যে পাসপোর্ট ইস্যু করেছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। আজ রোববার এ সন্তুষ্টির কথা জানান ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপ-মহাপরিচালক গিলাড কোহেন।

টুইটার বার্তায় গিলাড কোহেন বলেন, ‘অনেক বড় খবর! ইসরায়েলের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সামনে অগ্রসর হওয়ার ও ইসরায়েলেরে মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাবো, যাতে আমাদের উভয় দেশের জনগণ লাভবান ও সমৃদ্ধ হতে পারে।’

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপ-মহাপরিচালক গিলাড কোহেন তার টুইট পোস্টের সঙ্গে বাংলাদেশের পাসপোর্টের দুটি কপির (সংশোধনের আগের ও পরের) ছবিও সংযুক্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পাসপোর্টে এতদিন লেখা ছিল- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল’। কিন্তু বর্তমানে নতুন যে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তাতে লেখা আছে- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। অর্থাৎ আগের পাসপোর্ট থেকে ‘অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দদ্বয় বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মানে হলো- বাংলাদেশের বর্তমান পাসপোর্ট দিয়ে ইসরায়েল ভ্রমণে কোনো সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশেরও কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।