হাটে হাঁড়ি ভাঙল নাইকি: ক্ষেপে আগুন নেইমার

গত বছরের আগস্টে নেইমারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ক্রীড়া সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাইকি। কিন্তু কেন চুক্তি বাতিল করা হয়েছে তা এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি। অবশেষে শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাটি হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে নাইকি। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের বিরুদ্ধে নাইকির এক নারী কর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলে তারা।

নেইমার তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন বলেও দাবি করে নাইকি। নাইকি অভিযোগ প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পরই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটালেন প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) স্ট্রাইকার। নেইমার ধুয়ে দিয়েছেন নাইকিকে। ইন্সটাগ্রামে বিশাল একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তিনি। যেখানে নাইকির সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগটা পুরনো। ২০১৬ সালের। ২০১৮ সালে যার তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে নাইকির পক্ষ থেকে বোমা ফাটানো হয়। তারা জানায় নেইমারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার নেপথ্য কারণ। একই সঙ্গে যৌন হেনস্থার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করায় নাইকি। প্রতিক্রিয়ায় কী লিখেছেন নেইমার তার পোস্টে? পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘ব্যাপারটা বিকৃত করা হতে পারে। কারণ মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে এটা দেখছে। আমাদের জীবন এমনই; এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা জীবনেরই অংশ। আমি এটাও বুঝতে পারছি কিছু মানুষ আমার ব্যবহারের সমালোচনা করেন। তারা আমার খেলার ধরন ও জীবনযাত্রাকে পছন্দ করেন না। কারণ আমরা আলাদা।’

‘কিন্তু আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং দালিলিক কাগজপত্রাদি থাকা সত্ত্বেও এমন একটা বড় প্রতিষ্ঠান কীভাবে এটাকে বিকৃত করতে পারে। লিখিত শব্দগুলো সংশোধন করা যায় না। তারা প্রকৃতপক্ষে খুব স্পষ্ট; কোনো সন্দেহ নেই।’

‘আমার বয়স যখন ১৩, তখন আমি নাইকির সঙ্গে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করি। আমি সবসময়ই নিজেকে সাবধান করতাম, তোমার চরিত্র নিয়ে যেন কেউ কথা না বলে। আমাদের চুক্তি খুবই গোপনীয়। তারা চুক্তি বাতিল করেছে। অভিযোগ করছে আমি তদন্তে সহযোগিতা করিনি। এটা পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং মিথ্যা।’

‘২০১৭ সালে আমি আবার যুক্তরাষ্ট্রে যাই কোম্পানির প্রচারের জন্য। একই মানুষদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করতে থাকি। তারা আমাকে কিছু বলেননি। অথচ কিছুই পাল্টায়নি। ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ সালে আমরা অনেক সফর এবং বিজ্ঞাপন রেকর্ড করি। তখনো তারা আমাকে কিছু বলেনি। যেটাকে তারা গুরুত্ব দিয়েছে তা সম্পর্কে আমাকে কিছুই বলেনি। তাহলে সত্যিকার অর্থে এই দায়টা কার?’

‘নিজেকে বাঁচানোর জন্য কোনো সুযোগ আমাকে দেয়া হয়নি। আমি কোনো সুযোগ পাইনি এটা জানার, কে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এমনকি আমি তাকে চিনিও না। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কোনোদিন একটা কথাও হয়নি। আমি জানিই না তার (অভিযোগকারী নারী) কষ্টের কারণ কী। ওই মানুষটি একজন কর্মী ছিলেন; যিনি সুরক্ষিত ছিলেন না। আমি একজন ক্রীড়াবিদI আমিও সুরক্ষিত ছিলাম না। এটা কীভাবে সম্ভব?'

‘আমি আমার বুকে যাদের চিহ্নটা বহন করে বেড়াচ্ছি তারা আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছে। এটাই জীবন। আমি শক্তিশালী এবং সময়ের ওপর বিশ্বাস রাখছি। বিশেষ করে কঠিন এই সময়ের কথা মনে থাকবে। একদিন ঠিকই সত্যিটা সামনে আসবে। ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।’

নেইমারের প্রতিক্রিয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে নাইকির দেওয়া বক্তব্য: নাইকি খেলোয়াড়টির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে। তিনি আমাদের একজন কর্মীর সঙ্গে অন্যায় করেছেন এবং তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন। তিনি (অভিযোগকারী নারী) আমাদের বলেছেন তার গোপনীয়তা রক্ষা করতে। কাজেই একজন কর্মীর গোপনীয়তার ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে। তাই আমরা আইন প্রয়োগকারী কিংবা তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এটা শেয়ার করতে রাজি নই, যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি আমাদের অনুমতি দেন।’

নেইমারের বয়স এখন ২৯। ১৬ বছর আগে নাইকির সঙ্গে তার চুক্তি হয়। নাইকির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার এক মাস পর ২০২০ সেপ্টেম্বর পুমার সঙ্গে চুক্তি করেন নেইমার। তবু নাইকির প্রচার করে যাচ্ছেন নেইমার। কারণ তার ক্লাব পিএসজি ও জাতীয় দল ব্রাজিল যে নাইকির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ! তাই বুটে না থাকলেও নেইমারের জার্সিতে থাকছে নাইকির লোগো।