ইউরো ২০২০: বেলজিয়ামের শেষ সুযোগ

একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারদের নিয়ে গড়া বেলজিয়াম ফুটবল দল। গত বিশ্বকাপে তো বাজির দরে শীর্ষে ছিল ইউরোপের কালো ঘোড়ারা। সে যাত্রায় স্বপ্নপূরণ হয়নি তাদের। সেই দুঃস্মৃতির ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ হয়ে এসেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। খুব সম্ভবত সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ানদের এটাই বড় কোনো ট্রফি জয়ের শেষ সুযোগ।

ইউরোর গত আসরেও অবশ্য ফেভারিট ছিল দলটা। প্রতিটা পজিশনেই তাদের তারকা খেলোয়াড়ের অভাব ছিল না। তবু অনভিজ্ঞতার কাছে মার খেয়েছেন হ্যাজার্ড অ্যান্ড কোং। এবার কোনোকিছুতেই ঘাটতি নেই। দলটিতে খেলা খেলোয়াড়রা গেল ক্লাব মৌসুমে নিজেদের পজিশনে সেরা পারফর্মার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল ইডেন হ্যাজার্ড। দুই বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পর থেকে ফর্মহীনতা আর ইনজুরিতে ভুগছেন তিনি। এখনো চোটের অস্বস্তি আছে হ্যাজার্ডের। অ্যালেক্স উইটসেলও শতভাগ ফিট হতে পারেননি। ওদিকে আরেক মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে ‍ওঠেননি।

সবমিলিয়ে বেলজিয়ামের দুশ্চিন্তা মধ্যমাঠ নিয়ে। এই পজিশনের তিনজন খেলোয়াড়ের ইনজুরি প্রধান কোচ রবার্তো মার্টিনেজের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তবে স্প্যানিশ কোচ আশাবাদী, যথা সময়ে ফিট হয়ে উঠবেন শিষ্যরা। চোটকে এক পাশে রাখলে এবারের ইউরোতে সবচেয়ে শক্তিশালী দল বেলজিয়ামের।

প্রধান কোচ - রবার্তো মার্টিনেজ: সোনালি প্রজন্মের ফুটবলারদের এক সুতোয় গাঁথার প্রয়াসটা যিনি চালিয়েছেন তিনি মার্টিনেজ। সোয়ানসি সিটি, উইগান অ্যাথলেটিক এবং এভারটনের মতো ক্লাবকে কোচিং করিয়ে বেলজিয়ামের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। দলটাকে স্প্যানিশ কোচ খেলাচ্ছেন মনমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে।

প্রধান অস্ত্র - কেভিন ডি ব্রুইনে: সত্যি বলতে বেলজিয়াম দলে অস্ত্রের অভাব নেই। হ্যাজার্ড, থিবাউট কোর্তায়া, রোমেলু লুকাকু প্রত্যেকেই আপন মহিমায় ভাস্বর। তবে কেভিন ডি ব্রুইনেকে ভাবা হচ্ছে মার্টিনেজের তুরুপের তাস। মধ্য মাঠ থেকে পুরো ম্যাচটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারদর্শী ম্যানচেস্টার সিটির এই তারকা।

সদ্য বিদায়ী ইউরোপিয়ান ক্লাব মৌসুমে আগুন ঝরিয়েছেন ডি ব্রুইনে। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যানচেস্টার সিটি উদ্ধার করেছে লিগ শিরোপা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও উঠেছিল সিটিজেনরা। যদিও অল ইংলিশ ইউরোপিয়ান ফাইনালে চেলসির কাছে হেরে যায় সিটি। ওই ম্যাচে মুখমন্ডলে চোট পান ডি ব্রুইনে। তাকে ঘিরে রীতিমতো শঙ্কা জেগেছিল। পরে স্বস্তি ফিরেছে বেলজিয়াম শিবিরে।

তরুণ তুর্কি - জেরেমি ডুকু: গতির ঝড়ে আলোচনায় এসেছেন ডুকু। গেল বছরের অক্টোবরে তুর্কি ক্লাব অ্যান্ডারলেখট থেকে ফরাসি ক্লাব রেনেঁতে যোগ দিয়েছেন তিনি। কেন তাকে ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এনেছে রেনেঁ সেটার যৌক্তিকতা দেখিয়েছেন ডুকু। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত। ইতোমধ্যে বেলজিয়ামের হয়ে দুই গোল করে ফেলেছেন দ্রুতগামী এই উইঙ্গার। ১৯ বছর বয়সী এই উঠতি তারকাকে মার্টিনেজ প্রস্তুত করেছেন ইডেন হ্যাজার্ডের বিকল্প হিসেবে।

গ্রুপপর্ব: ‘বি’ গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল বেলজিয়াম। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফেভারিট তারাই। তবে নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। কারণ গত বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে রাশিয়া। যারা বেলজিয়ানদের গ্রুপপর্বে মোকাবেলা করবে। ফিনল্যান্ড এবং ডেনমার্ককেও হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই।

সম্ভাব্য একাদশ: গোলরক্ষক: কোর্তোয়া; ডিফেন্ডার: অ্যাল্ডারওয়েরেল্ড, ডেনায়ের, ভের্টোঙ্ঘেন; মিডফিল্ডার: কাস্টাগনে, টেলিম্যান্স, ডোনডোঙ্কার, থোরগান হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনে, ইডেন হ্যাজার্ড; ফরওয়ার্ড: লুকাকু

সেরা সাফল্য: রানার্সআপ (১৯৮০)

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ১

বেলজিয়াম ম্যাচসূচি:

১২ জুন: রাশিয়া-বেলজিয়াম (সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম; সেন্ট পিটার্সবার্গ)

১৭ জুন: ডেনমার্ক-বেলজিয়াম (পার্কেন স্টেডিয়াম; কোপেনহেগেন)

২১ জুন: বেলজিয়াম-ফিনল্যান্ড (সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ)