রাশিয়ার কড়া অবস্থান, বিতর্ক ‘উসকে’ দিল উয়েফা!

বল মাঠে গড়ানোর আগেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। হঠাৎ করেই রাশিয়াকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউক্রেন। নিজেদের ইউরোর জার্সিতে সীমান্তের ছবি এঁকে দেয় ইউক্রেনিয়ানরা। মানচিত্রের রেখায় বিতর্কিত উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে দেখায় তারা। যা নিয়ে আপত্তি তোলে রাশিয়া।

জার্সিতে ‘ক্রিমিয়া’র সীমান্ত আঁকার পাশাপাশি দুটি স্লোগান যুক্ত করে ইউক্রেন। যার একটি ছিল দেশটির সেনাবাহিনীর স্লোগান ‘গ্লোরি টু হিরোজ’। ক্ষুব্ধ রাশিয়া উয়েফার কাছে নালিশ জানায়। প্রতিবেশী দলটি যাতে নতুন করে ইউরোর জার্সি তৈরি করে এ জন্য উয়েফাকে অনুরোধ জানায় তারা। কিন্তু রাশানদের অনুরোধের পুরো ঢেঁকি গিলল না ইউরোপিয়ান ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা উয়েফা।

ইউক্রেনের জার্সিতে ‘ক্রিমিয়া’ সীমান্ত রাখার অনুমতি দিয়েছে তারা। তবে জার্সি থেকে ‘রাজনৈতিক’ তথা সেনা স্লোগান সরিয়ে নিতে বলেছে উয়েফা। আর আগের মতো ‘গ্লোরি টু ইউক্রেন’ স্লোগান থাকছে জার্সিতে। ইউক্রেন যে বেদখল হয়ে যাওয়া ক্রিমিয়া রাজ্যের অধিকার আরোপ করছে তা স্পষ্ট। জার্সিতে সেনা স্লোগান দিয়েও তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে তারা। যদিও মুখে অন্য কথা বলছে ইউক্রেন।

দেশটির ফুটবলের পক্ষ থেকে বেলা হয়েছে, ‘আমাদের বিশ্বাস ইউক্রেনের সীমান্তের প্রতিচ্ছবি জার্সিতে থাকলে খেলোয়াড়দের শক্তি বাড়বে। অনুপ্রেরণা পাবেন খেলোয়াড়রা। কারণ তারা পুরো দেশের জন্য লড়াই করবেন।’ প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া বলেছে, ‘সাত বছর ধরে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড। কাজেই ইউক্রেনের জার্সিতে যে নকশা করা হয়েছে তা অযৌক্তিক।’

রাশিয়া আশা প্রকাশ করে বলে, ‘আমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে উয়েফা কঠোর পদক্ষেপ নেবে। ইউরোর জন্য নতুন জার্সি তৈরি করার মতো সময় এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।’ রাশানদের আশা পুরোপুরি পূরণ হলো না। বলতে গেলে তাদের দাবি অগ্রাহ্যই করল উয়েফা। ইউক্রেনের জার্সিতে যে রাশিয়ার মূল সমস্যা ‘ক্রিমিয়া’ থাকছেই!

১৯৫৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট নিকিতা খ্রুশ্চভ রুশ ভাষাভাষী ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনকে ‘উপহার’ দেয়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের উপদ্বীপটি ফের দখলে নেয় রাশিয়া। পরবর্তীতে বিচ্ছিন্ন রাজ্যটি স্বাধীনতা চেয়ে লড়াই করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাতে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। যদিও এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মহল তাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়নি।

আন্তর্জাতিক মহল ও জাতিসংঘ ক্রিমিয়া উপদ্বীপটিকে এখনো ইউক্রেনের রাজ্য হিসেবে দেখছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিমিয়ায় গণভোটের আয়োজন করা হয়। তখন ৯৬.৬ শতাংশ ভোটার ইউক্রেনে না থেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। গণভোটে রাশিয়ার প্রচ্ছন্ন ছায়া ছিল বলে অভিযোগ করে ইউক্রেন।

বিচ্ছিন্ন এই রাজ্যটি নিয়ে বহু বছর রাশিয়া-ইউক্রেনের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল চলছে। একটা পর্যায়ে তো দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল! কয়েক বছর পর ফের ক্রিমিয়া আলোচনায় এলো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট দিয়ে। বৃহস্পতিবার জার্সির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে উয়েফা আবার ইউক্রেনের পক্ষ নিল। এই বিতর্ক কোথায় শেষ হয় কার্যত সেটাই অপেক্ষার।