ইউরো ২০২০: রাজত্ব উদ্ধারের স্বপ্ন নেদারল্যান্ডসের

দুঃস্বপ্নের কয়েকটা বছর পার করেছে নেদারল্যান্ডস। ২০১৬ সালে ইউরো ও ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। ডাচ ফুটবলের পুনর্জন্ম হয়েছে রোনাল্ড কোম্যানের অধীনে। তার ছোঁয়ায় বদলে যায় কমলা শিবির। কোম্যানের অধীনে ২০১৯ সালে উয়েফা নেশনস লিগের ফাইনালে ওঠে ডাচরা। যদিও পর্তুগালের কাছে শিরোপা লড়াইয়ে হেরে যায় তারা।

প্রত্যাশিতভাবেই দাপটের সঙ্গে ইউরো ২০২০ আসরের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় নেদারল্যান্ডস। কোম্যানের অধীনেই এই টুর্নামেন্টটা খেলার কথা ছিল ডাচদের। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে টুর্নামেন্ট পিছিয়ে দেওয়া হয় এক বছর। চুক্তি শেষে আর মেয়াদ বাড়াননি কোম্যান। সদ্য বিদায়ী মৌসুমের শেষ দিকে বার্সেলোনায় চলে যান অভিজ্ঞ এই কোচ। তাতে থমকে যায় নেদারল্যান্ডসের স্বপ্ন।

কোম্যান স্বপ্ন দেখিয়ে চলে গেছেন। ডাচদের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব এখন ফ্র্যাঙ্ক ডি বোয়ের কাঁধে। এ যাত্রায় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। ইনজুরি নিয়ে ইউরো থেকে ছিটকে গেছেন দলের সেরা ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক। তবে আশার কথা হচ্ছে, লিভারপুল তারকার অভাব পুষিয়ে দেওয়ার মতো ডিফেন্ডার আছে নেদারল্যান্ডসে। এই দলটাতে আছেন একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলার। যা এবারের ইউরোতে ডাচদের করে তুলেছে ফেভারিট।

প্রধান কোচ - ফ্র্যাঙ্ক ডি বোয়ের: ইউরোতে ১৯৮৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এরপর শিরোপা জেতা তো দূরের কথা, ফাইনালেই আর উঠতে পারেনি ডাচরা। কোম্যানের অধীনে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা দলটা নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল। কিন্তু তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। কারণ ডি বোয়ের সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হয়েছে। কোম্যান যাওয়ার পর ডি বোয়ের অধীনে প্রথম চার ম্যাচে জয়হীন থাকতে হয়েছে নেদারল্যান্ডসকে। ডাচ ফুটবলের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোচ যিনি শুরুর চার ম্যাচের একটিতেও জয় পেলেন না। সম্প্রতি তুরস্কের কাছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচেও হেরে বসেছে কমলা শিবির।

প্রধান অস্ত্র - ফ্রেঙ্কি ডি জং: নেদারল্যান্ডস দলে তারকা খেলোয়াড়ের অভাব নেই। ভরসা করার মতো কয়েকজন ফুটবলারই আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ফ্রেঙ্কি ডি জং। এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা মিডফিল্ডারদের কাতারে রাখা হয় ২৪ বছর বয়সী এই তারকাকে। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২০১৯ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছিল আয়াক্স। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, ডি জংকে এখনো সেভাবে কাজে লাগতে পারেননি নতুন কোচ।

তরুণ তুর্কি - রায়ান গ্রাভেনবার্চ: আয়াক্সে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুতেই চমক দেখিয়েছেন গ্রাভেনবার্চ। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন স্বপ্নের জাতীয় দলে। শারিরীকভাবে ভীষণ শক্তিশালী গ্রাভেনবার্চ দীর্ঘ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণভাগের কীভাবে মেলবন্ধন করতে হয় সেটা ভালোই জানা আছে তার। কিন্তু তারকাদের কারণে শুরুর একাদশে খুব একটা সুযোগ পান না গ্রাভেনবার্চ। এবারের ইউরোতে নেদারল্যান্ডসের বেঞ্চের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তিনিই।

গ্রুপপর্ব: কাগজ-কলমের হিসেবে ‘সি’ গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল নেদারল্যান্ডস। তাদের নক আউট পর্বে যাওয়া নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই। এর কারণ, গ্রুপের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী- ইউক্রেন, অস্ট্রিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়ার ওপর ছড়ি ঘোরানোর যথেষ্ঠ সামর্থ্য আছে ডাচদের। তা ছাড়া গ্রুপপর্বের তিনটি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলার বাড়তি সুবিধাটা পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস।

সম্ভাব্য একাদশ - গোলরক্ষক: কার্ল; ডিফেন্ডার: ডামফ্রিস, ডি লিখট, ব্লাইন্ড, ভিনডাল; মিডফিল্ডার: ক্লাসেন, ভিনালডাম, ডি জং; ফরওয়ার্ড: বারগিস, ডিপেই, মালেন।

সেরা সাফল্য: ১৬

ফিফা র্যাঙ্কিং: চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৮)

ম্যাচসূচি: নেদারল্যান্ডস:

১৩ জুন: নেদারল্যান্ডস-ইউক্রেন (ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়াম; অ্যামস্টারডাম)
১৭ জুন: নেদারল্যান্ডস-অস্ট্রিয়া (ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়াম; অ্যামস্টারডাম)
২১ জুন: নেদারল্যান্ডস-উত্তর মেসিডোনিয়া (ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়াম; অ্যামস্টারডাম)