ইউরোর ইতিহাসে নতুন রেকর্ড: বেলজিয়ামকে কাঁদিয়ে সেমিতে ইতালি

অনেকের চোখে ম্যাচটা ফাইনালের আগে আরেকটা ফাইনাল। এমনটা ভাবাটা একেবারেই অমূলক ছিল না। একদল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বসেরা, অন্যদল এবারের ইউরো টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্তিধর। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে ইতালি ও বেলজিয়ামের কথা। জায়ান্ট দুই দলের লড়াইটাও হলো দম বন্ধ করা উত্তেজনায়।

মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ এরিনায় রোমাঞ্চকর ম্যাচটায় শেষ হাসি হাসল ইতালি। শুক্রবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামকে ২-১ গোলে হারিয়ে পুরনো রাজত্ব উদ্ধারের অভিযানে আরেকটা ধাপ পার হলো ইতালিয়ানরা। আগামী মঙ্গলবার লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে স্পেনের মুখোমুখি হবে ইতালি।

ম্যাচের তিনটি গোলই হয়েছে বিরতির বাঁশির আগে। সবকটি গোল হয়েছে ১৬ মিনিটের ব্যবধানে। ৩১ মিনিটে ইতালিকে এগিয়ে দেন নিকোলো বারেল্লা। ১৩ মিনিট পর দুর্দান্ত এক গোলে ব্যবধান বাড়ান লরেঞ্জো ইনসিগনে। দুই গোল হজমের পর ঘুম ভাঙে বেলজিয়ামের। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমান রোমেলু লুকাকু।

চলমান ইউরো টুর্নামেন্টে এটা চতুর্থ গোল বেলজিয়ান স্ট্রাইকারের। এই গোলের ওপর দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় রবার্তো মার্টিনেজের দল। দ্বিতীয়ার্ধে যথেষ্ঠ সুযোগও তৈরি করেছে তারা। কিন্তু সমতায় ফেরা হয়নি তাদের। ওদিকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ইতালির সামনেও। এই অর্ধে গোলের দেখা পায়নি তারাও।

মূলপর্ব ও বাছাই মিলিয়ে এনিয়ে টানা ১৫ ম্যাচ জিতল ইতালি। যা ইউরোর ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। ইতালির জয়ে দর্পচূর্ণ হয়েছে বেলজিয়ামের। আজ্জুরিদের আগে টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছিল এই বেলজিয়ানদেরই। সেই তাদের কাঁদিয়েই সেমিফাইনালে উঠল ইতালি। সঙ্গে রেকর্ডটাও ভেঙে নিল রবার্তো মানচিনির দল।

টানা তিনটি ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে ইতালি। এবার শেষ আটের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে এলো আজ্জুরিরা। মানচিনির অধীনে বদলে যাওয়া দলটি এক রকম অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। শেষবার এই দলটা হেরেছিল ২০১৮ সালে; উয়েফা নেশন্স লিগে। পর্তুগালের কাছে হারের পর এনিয়ে টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থাকল ইতালি।

মিউনিখে মাঠে নামার আগেই ধাক্কা খায় বেলজিয়াম। ইনজুরির কারণে ইডেন হ্যাজার্ড থাকলেন সাইড বেঞ্চে। কেভিন ডি ব্রুইনেকে নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা অবশ্য উবে গেছে। কিন্তু মাঠে নেমেও দলের স্বপ্ন বাঁচাতে পারলেন না এই মিডফিল্ডার। ওদিকে চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেই জালের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন লিওনার্দো বনুচ্চি।

যদিও ভিএআরের সহায়তায় তার গোলটা বাতিল করে দেন রেফারি। ম্যাচের বয়স আধ ঘণ্টা পেরোনোর পর স্বস্তির গোলটা পায় ইতালি। রক্ষণের ভুলেই গোলটি হজম করে বেলজিয়াম। একই ভুল ইতালিও করেছিল। জিওভান্নি লরেঞ্জো ডি-বক্সে ধাক্কা মেরে বসেন জেরেমি দোকুকে। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে ব্যবধান কমাতে ভুল হয়নি লুকাকুর।

দ্বিতীয়ার্ধে হাস্যকর একটি গোল মিস করেছেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার। যার খেসারত বেলজিয়ামকে দিতে হলো বিদায় নিয়ে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে এনিয়ে টানা দ্বিতীয়বার শেষ আট থেকে ছিটকে গেল ইউরোপের কালো ঘোড়ারা। বলতে গেলে ইউরো ট্রফি জয়ের সম্ভাব্য সেরা সুযোগটা হাতছাড়া রল সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম। কারণ এই দলটার অনেকেই হয়তো থাকবেন না আগামী ইউরোতে।