এবার তারা শত্রু

এক সঙ্গে কত স্মৃতি, কতো খুনসুটি, কতো সাফল্য। কাঁধে কাধ মিলিয়ে বার্সেলোনার জন্য কিনা করেছেন তারা! ন্যু ক্যাম্পে চার বছরে লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়র হয়ে উঠেছেন একে অন্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার বার্সা ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছেন কয়েক বছর আগে। তাতে কিঞ্চিত পরিমাণও বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি।

বরং সুযোগ পেলেই তারা বন্ধুত্বের নিদর্শন দেখিয়েছে তারা। ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুরই একটা আক্ষেপ আছে। তারা কখনো কোপা আমেরিকা জেতেননি। বিধাতা বড্ড বেরসিক। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে দুই বন্ধুকে মুখোমুখি করে দিয়েছেন। তাই স্বপ্নপূরণ হবে একজনের। এই লড়াইয়ে তারা ভুলে যাবেন বন্ধুত্ব। কারণ পেশাদার ফুটবলে আবেগ দেখানোর সুযোগ নেই।

মেসির এটা হতে যাচ্ছে জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে পঞ্চম ফাইনাল। এর আগে কোপা আমেরিকার তিনটি ফাইনাল হেরেছেন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপেও তীরে এরে তরি ডুবেছে মেসিদের। তার এই ফাইনালের দুষ্টচক্রে আটকে যাওয়ার শুরুটা হয়েছিল এই ব্রাজিলের বিপক্ষেই। ২০০৭ সালে প্রথমবার সেলেকাওদের কাছে কোপার ফাইনালে হেরেছেন তিনি।

দুই বছর আগে গত অসারেও মেসির স্বপ্নপূরণ হতে দেয়নি এই ব্রাজিলই। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারানোর পর শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয় সেলেকাওরা। ওই আসরে অবশ্য ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি নেইমার। তাই কোপা না জেতার আক্ষেপটা তার থাকবেই। এবার ঘরের মাঠে সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান তিনি।

মরিয়া হয়ে আছেন মেসিও। এবারের আসরে প্রায় অবিশ্বাস্য ফর্মে আছেন তিনি। চার গোল করে নিজেকে রেখেছেন গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ের শীর্ষে। আর পাঁচ গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। নিঃসন্দেহে এবারের আসরের সেরা ফুটবলারের তকমা তার গায়ে জড়াবে। কিন্তু গোল্ডেন বুট বা বল নয়, মেসির চাওয়া কেবলই কোপার রুপালি ট্রফি।

ফর্মে আছেন নেইমারও। তবে মেসির মতো অতোটা নয়। আসরে এখন পর্যন্ত দুই গোল করেছেন পিএসজি সুপারস্টার। এ ছাড়া দলের তিনটি গোলে রেখেছেন প্রত্যক্ষ অবদান। ফাইনালে আর্জেন্টিনার আতঙ্কের নাম তিনি। আর ব্রাজিলের সব ভয় মেসিকে ঘিরে। তাই লড়াইটা শুধু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনারই নয়, দুই বন্ধুরও বটে। মেসি-নেইমারের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনের লড়াইটিই গড়ে দিতে পারে শিরোপা ভাগ্য।

খুব স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুত্ব শব্দটা দুজনই অন্তত এই ম্যাচের জন্য আলমারিতে তুলে রাখবেন তারা। নেইমার অবশ্য আগে থেকেই ফাইনালের জন্য মেসিকে চেয়েছেন। এটাও জানিয়েছিলেন যে, বন্ধুদের হারিয়ে শিরোপা জিততে চান তিনি। আর মেসি? তার চাওয়াটাও তো একই। দুজনই চাইবেন সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- দুজনই যদি ফাইনালে সেরাটা দেন তাহলে কী হবে? আর যাই হোক না কেন, রোমাঞ্চকর উপভোগ্য একটা ম্যাচ হবে।

বাংলাদেশ সময় আগামীকাল রোববার ভোর ছয়টায় মুখোমুখি হবে দুই চিরশত্রু। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এই মহাযুদ্ধের মঞ্চ রিও ডি জেনিইরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম।