আপনি পড়ছেন

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মিনু আক্তার নামের অন্য এক নারীকে দিয়ে খাটানো সেই কুলসুমা আক্তার কুলসুমী অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। চট্টগ্রামের পুলিশ বুধবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় বলে জানা গেছে।

minu akter chattagram courtমুক্তির পর মিনু আক্তার, ফাইল ছবি

কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন কুলসুমীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পতেঙ্গা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন কুলসুমী।

জানা যায়, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে কুলসুমীর হয়ে জেল খাটা মিনু আক্তার মুক্তি পান। কিন্তু মাত্র ১৩ দিনের মাথায় গত ২৮ জুন মধ্যরাতে নগরীর বায়েজিদ লিংক রোডে ট্রাকচাপায় তিনি মারা যান। প্রথমে পরিচয় না মিললেও পরে তা নিশ্চিত করে পুলিশ।

cmp police logoচট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের লোগো

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৯ জুলাই মোবাইল ফোন নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবি নামের এক পোশাককর্মীকে হত্যা করা হয়। নগরীর কোতোয়ালী থানায় ওই ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

ওই বছরের ২৬ অক্টোবর পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করে। রিমান্ড শেষে ৩১ অক্টোবর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কুলসুমীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর কুলসুমী জামিনে বের হন। এর প্রায় ৮ বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। রায়ে কুলসুমীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। তবে রায়ের দিন আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন কুলসুমী। পরে তার বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১২ জুন উল্লিখিত মিনু আক্তার কুলসুমী ‘সেজে স্বেচ্ছায়’সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সন্তানদের ভরণ-পোষণের ‘মিথ্যা আশ্বাসে’ মিনু কারাগারে যান বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার ময়নামতি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন মিনু। ৫ বছর আগেই তার স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পর মিনু আক্তার তার সন্তানদের নিয়ে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় চলে যান।

এদিকে, মিনু যখন ছেলে-মেয়ের ভরণ-পোষণের মিথ্যা আশ্বাসে অন্যের হয়ে জেল খাটছিলেন তখন সীতাকুণ্ডের একটি এতিমখানায় থাকতো তার দুই ছেলে ইয়াছিন (১০) ও গোলাপ (৭)। এ ছাড়া স্থানীয় এক ব্যক্তি মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে (৫) লালন-পালন করছিলেন। অথচ যে আশ্বাসে মিনু জেল খেটেছেন সেই হিসাবে কোনো টাকা বা সন্তানদের জন্য খাবার কিছুই দেওয়া হয়নি।

এই অবস্থার মধ্যেই ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন কুলসুমী। এক সপ্তাহ পর ৩০ এপ্রিল তার আপিল গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে জামিনের আবেদন করেন দণ্ডিত কুলসুমী। তবে চলতি বছরের গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার গত ২১ মার্চ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর চতুর্থ দায়রা জজ আদালতকে চিঠি দিয়ে জানান যে, কারাগারে থাকা ওই নারী দণ্ডিত কুলসুমী নন। পরদিন মিনু আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তিনি জবানবন্দি দেন।

আইনজীবীরা ওই সময় জানান, মিনু আক্তার তার জবানবন্দিতে বলেছিলেন যে, মর্জিনা নামের এক নারী তার ছেলে-মেয়েকে চাল, ডাল ও অন্যান্য ভরণ-পোষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে তিনি চেনেন না বলেও জানান।

এ ছাড়া কারাগারের নিবন্ধন দেখে হাজতি আসামি কুলসুমী ও সাজা ভোগকারীর মধ্যে অমিল খুঁজে পান আদালত। এর পর আদালত যাবতীয় কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠান। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ওই সময় আইনজীবী মো. শিশির মনির বিষয়টি আপিল সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। শুনানি শেষে গত ৭ জুন মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

উচ্চ আদালতের সেই আদেশ চট্টগ্রামে পৌঁছালে গত ১৬ জুন মুক্তি পান মিনু আক্তার। অন্যদিকে, তার আগে গত এপ্রিলে রমজান মাসে দুর্ঘটনায় মারা যায় মিনুর মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। মুক্তির পর মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনতে পান মিনু আক্তার।

এদিকে, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার ১৩ দিনের মাথায় গত ২৮ জুন নগরীর বায়েজিদ লিংক রোডে গভীর রাতে ‘ট্রাকচাপায়’ মারা যান মিনু। পরদিন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ দাফন করে। পরে জানা যায়, নিহত নারী মিনু আক্তার। মিনুর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ এবং তার ভাই রুবেল হোসেন মৃত্যুর ঘটনাটিকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে তা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.