জলবায়ু পরিবর্তন, যেসব ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪৮টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। উষ্ণতা বাড়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তাতে এসব দেশের বিশাল অংশ তলিয়ে যেতে পারে। এর ফলে উপকূলে বসবাস করা বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূলের ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। কিন্তু এরইমধ্যে কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি আরো জানান, সমূদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদী-বিলের পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। নদী ভাঙ্গন ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার বরাত দিয়ে ডয়চে ভেলে জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৪ লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে স্থায়ীভাবে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। এই সংখ্যাটা প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার। শহরমুখী হওয়া এসব মানুষের ৭০ শতাংশই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্বাস্তু হয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাপার বাগেরহাটের মোংলার আহ্বায়ক নুর আলম শেখ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলে লবনাক্ততা ও নদী ভাঙন বেড়েছে। যার বিরূপ প্রভাবে কৃষি বিষয়ক কাজ হারাচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। উদ্বাস্তু হয়ে তারা কাজের সন্ধানে একা কিংবা পরিবার নিয়ে ছুটছেন শহরে।

গরীবের পাশাপাশি ধনীরাও পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ফসলের ক্ষতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর খাবার পানির সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সবাই। লবণ পানির জন্য প্রতি ৩ জনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

বাস্তুচ্যুতি ও ক্ষতির বিষয়টি এবারের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-২৬’ এ তুলে ধরে ধনী দেশগুলো থেকে তহবিল আদায়ের চেষ্টা করবে ঢাকা। এ জন্য আজ রোববার যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হতে চলা সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরছে সরকার।

তাতে জলবায়ু মোকাবেলায় করোনাকালে বরাদ্দ কমলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১৮৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকছে। এ ছাড়া নিজস্ব অর্থে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং জলবায়ু ও তহবিল নিয়ে ২৫টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে, সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৬

এ ছাড়া এবারের জলবায়ু সম্মেলনে অভিযোজন ও প্রশমনে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরবে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রয়েছে- অভিযোজন কার্যক্রম বাড়ানো এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা এবং একটি সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা করা।

এ বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। এরইমধ্যে উপকূলের অনেক বাড়িঘর, ফসলি জমি ও ফসল হারাচ্ছে। এ জন্য অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে ‘ফিফটি ফিফটি’ বরাদ্দ চাইবে বাংলাদেশ।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অভিযোজন ও প্রশমনে একটি তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো। সেটি বাস্তবায়নের তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিমাণটা আরো বাড়ানোর সুপারিশ করবে বাংলােদশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮ দেশের জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম, সিভিএফের সভাপতি বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ফোরামে এসব দেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে এক যৌথ নিবন্ধেও এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি।