নির্বাচন: রাজনীতির অন্দরমহলে চলছে নতুন হিসাব-নিকাশ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে করোনাকালে রাজনীতির অন্দরমহলে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এরইমধ্যে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে মেরুকরণের বিভিন্ন লক্ষণও। নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে, আসছে নতুন জোটের ঘোষণা। এর বাইরে বিদ্যমান প্রধান দুই জোটে পুনর্বিন্যাসের আভাসও মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট রাজীনতিক দলগুলোর দলীয় পতাকা, ফাইল ছবি

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের এখনো বছর দুয়েক বাকি, তার ওপর আবার করোনাকাল। তবে মাঠের রাজনীতি তেমন একটা দেখা না গেলেও থেমে নেই পর্দার অন্তরালে। অতীতের মতো নির্বাচন সামনে রেখে দল ও জোটে ভাঙা-গড়ার নানামুখী তৎপরতা চলছে, শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ।

গণফোরাম ছেড়ে আসা ড. রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নতুন ধারার রাজনীতির অঙ্গীকার করা দলটির নাম ‘বাংলাদেশ গণ-অধিকার পরিষদ’। মূলত এর পরেই রাজনীতির মহলে দল ও জোট কেন্দ্রিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। নির্বাচন যত কাছে আসবে, এ ক্ষেত্রে ভাঙা-গড়ার খেলাও তত স্পষ্ট হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, ইসলামি দলগুলো নিয়ে নতুন একটি নির্বাচনী জোট গঠনের প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই চলছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা কয়েকটি দলকেও দেখা যেতে পারে সম্ভাব্য এই জোটে। এতদিন জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি দলও এবার জোটবদ্ধ হতে পারে, সেটি হলে হাফ ডজন দল নিয়ে হবে এই জোট। এমন আভাসই দিয়েছেন জোট গঠনের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা।

সম্প্রতি খেলাফত মজলিশসহ কয়েকটি দলের অংশ বিশেষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায়। বিএনপির কারণে জোটটি একেবারেই নিষ্কিৃয় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ শরিক দলগুলোর। এমনকি কর্নেল অব. অলি আহমাদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা এলডিপিসহ কয়েকটি দল প্রয়োজনে জোট ছাড়ার হুমকি দিয়ে আসছে।

তবে বসে নেই বিএনপিও, তারা নিজ দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছে। সেইসঙ্গে চলছে ২০ দলীয় জোট পুনঃবিন্যাস করে নির্বাচন কেন্দ্রিক বৃহত্তর জোট নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও দাবিভিত্তিক অন্যান্য দলকে সম্পৃক্ত করে সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।

দলটির নেতারা জানান, জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে তারা তাদের নতুন ‘প্ল্যাটফর্ম’এ যুক্ত করে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে চায়। সে অনুযায়ী, পরিকল্পিতভাবে কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। বিষয়টি শিগগিরই প্রকাশ্যে আসবে কিনা, তা সরকারের আচরণ পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করছে।

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আবারো মহাজোটে রূপ নিতে পারে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। বিষয়টি নিয়ে ভেতরে ভেতরে আলোচনা চললেও সবকিছুই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। সরকারি জোটে ক্ষোভ থাকলেও ভাঙা-গড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল বড় জোট নিয়ে নামলে জাতীয় পার্টি তথা জাপাকে নিয়ে ফের মহাজোট পুনঃবিন্যাস করা হবে। এ নিয়ে যাতে সামনে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়, সে জন্য এখন থেকেই কাজ চলছে ভেতরে ভেতরে। তবে বাম দলগুলোর মধ্যে নানা কারণে ক্ষোভ থাকলেও তারা জোট ছাড়বে না বলেই মনে করেন তারা।

জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, তারা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, সব মহলের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করে চলেছেন তারা। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বর্তমান সংসদের বিরোধী হিসেবে পৃথক জোট নিয়ে নির্বাচন করার বিষয়েও কাজ করছেন তারা।

এর বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির নেতৃত্বে বামপন্থী ৮টি দল নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়েছিল বেশ আগে। এই জোটও সক্রিয় না থাকায় গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি বাম ঘরানার দল নবগঠিত গণ-অধিকার পরিষদের সঙ্গে জোট গঠন করতে পারে। এতে ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ কয়েকটি দল যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গত বছরের মে মাসে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ বা এবি পার্টির আত্মপ্রকাশ হয়। এটির আহ্বায়ক হন সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্যসচিব ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মনজু। সম্প্রতি দলটির অনেক নেতাকর্মী ২০ দলের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিতে যোগ দিয়েছেন।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক জোট বা দলে ভাঙা-গড়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগ গোল করলেও ভোট কাছে এলে বিষয়টি ক্রমশ প্রকাশ্যে আসবে। তবে তা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির বাইরে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না।