৮০ দিনেও খোঁজ মেলেনি ছোট্ট সোহেলের

যে কোনো মূল্যে আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। সামনে প্রচণ্ড ভীড়, মনে তালেবানের ভয়। এমন সময় এক মার্কিন সেনা জিজ্ঞেস করলেন, কোনো সাহায্য লাগবে? পাঁচ সন্তানের মা-বাবা তখন সবচেয়ে ছোট ছেলেটিকে, যার বয়স মাত্র দুই মাস তাকে তুলে দিয়েছিলেন ওই সেনার হাতে। তারপর ৮০ দিন পার হয়ে গেলেও খোঁজ পাওয়া যায়নি ছোট্ট সোহেলের।

সোহেলের নিখোঁজ সংবাদ

সোহেলের বাবা-মা মির্জা আলি আহমাদি ও সুরাইয়া গেটের কাছাকাছি স্থানে মার্কিন সৈন্যের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করেছিলেন। ভেবেছিলেন, ৫ মিটার দূরত্বের গেটে পৌঁছে তারা আবার সোহেলকে হাতে পাবেন। কিন্তু লোকজনের ভিড়ে ওই সামান্য পথ পাড়ি দিতে তাদের লেগে যায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময়। এরপর ভেতরে গেলেও সোহেলকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১০ বছর ধরে মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কাজ করা মির্জা আলি যাকে সামনে পেয়েছেন, সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করেন। বেশিরভাগই জানান, তারা কিছু জানেন না। একজন তাকে বলেন, শিশু হওয়ার কারণে তাকে একটি বিশেষ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। কিন্তু সেখানে পৌঁছেও তারা কিছুই পাননি। সেখানে ছিল সুনসান নিস্তব্ধতা।

 সোহেলকেও এভাবেই তুলে দেয়া হয়েছিল মার্কিন সেনার হাতে

মির্জা আলি বলেন, আফগানিস্তান ত্যাগের আগে আমি কমপক্ষে ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছি। কারো কাছেই আশাজাগানো কিছু জানতে পারিনি। মির্জা আলি ও সুরাইয়া দম্পতি ১৭, ৯, ৬ ও ৩ বছর বয়সী অন্য চার সন্তানকে নিয়ে প্রথমকে কাতার, তারপরে জার্মানি এবং অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। পরিবারটি এখন টেক্সাসের ফোর্ট ব্লিসে অন্যান্য আফগান শরণার্থীদের সাথে পুনর্বাসনের অপেক্ষায় রয়েছে।

মির্জা আলি বলেছেন, তিনি একই সময়ে অন্যান্য পরিবারকে তাদের বাচ্চাদের কাবুল বিমানবন্দরের বেড়ার ওপরে সৈন্যদের হাতে তুলে দিতে দেখেছেন। ডায়াপার পরা একটি ছোট শিশুর এমন ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। পরে শিশুটি তার বাবা-মায়ের সাথে পুনরায় মিলিত হয়। কিন্তু আমরা সোহেলের সন্ধান পাইনি।

এদিকে ঘটনা জানতে পেরে সোহেলের ছবিসহ নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করেছে আফগান শরণার্থীদের সহায়তাকারী একটি সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে-বাইরে নিয়োজিত সব সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। শিশুটিকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে সবাই সাধ্যমত কাজ করছেন।

সোহেলের মা সুরাইয়া বেশিরভাগ সময় কান্নাকাটি করেই পার করছেন। সবাই তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, অচিরেই ফিরে পাওয়া যাবে সোহেলকে।