সাতক্ষীরার হাসপাতালটি যে কারণে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’

পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যকলার জন্য যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস, রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। রিবার এই পুরস্কার স্থাপত্যকলায় অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। পুরস্কারের জুরি বোর্ড হাসপাতাল স্থাপনাটিকে একটি ‘মানবিক স্থাপত্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। গত ২৫ জানুয়ারি এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। খবর আল জাজিরার।

সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল

জানা গেছে, জার্মানির বার্লিনের জেমস সায়মন গ্যালারি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতুকে পেছনে ফেলে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কার আদায় করে নেয় বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কম খরচে ভবনটির নির্মাণ করায় তারা এই পুরস্কার লাভ করে।

৮০ শয্যার হাসপাতালটির নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এবং এটি নির্মাণ করেছে তার প্রতিষ্ঠান আরবানা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয় হাসপাতালটি। ২০১৩ সালে নকশা করার পর চার বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ও স্থপতি কাশেফ চৌধুরী

শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ একর জমির ওপর আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০টি ভবনের সমন্বয়ে ৪৭ হাজার ৭৭২ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এটি বিস্তৃত। স্থানীয় নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। এছাড়া নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকায় গরমের সময়ও হাসপাতালটির আঙ্গিনাগুলো থাকে শীতল।

স্থপতি কাশেফ বলেন, যখন কেউ অসুস্থ হয় বা কারো যত্নের প্রয়োজন হয় তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো তার মানসিক অবস্থা। আমি মনে করি, চিকিৎসার সময় আপনি যে ধরনের জায়গায় বাস করেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতাল থেকে জলাশয়, গাছ, পাখির শব্দ, আলো-বাতাস- এগুলো নিরাময়ের দিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়।

পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী বলেন, এর মধ্য দিয়ে আরও অনেকে সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়েই বর্তমান বিশ্বের সংকটগুলো মোকাবেলা করে মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি যত্নবান থেকে স্থাপত্য নির্মাণে উৎসাহিত হবেন।

কাশেফ মাহবুব চৌধুরী বলেন, সবসময় পানির সঠিক ব্যবহার হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এর অর্থ হলো, এ এলাকায় যে শস্যখেতগুলো রয়েছে, সেগুলো তলিয়ে যাচ্ছে এবং চিংড়ির ঘেরে পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠে যে পানি রয়েছে, তা আরো লবণাক্ত হচ্ছে। ফলে সাতক্ষীরা অঞ্চলে বর্ষার সময় মানুষ বৃষ্টির পানি ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন। তাই এ ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়।

রিবার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, দুবছর পরপর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। বিশ্বজুড়ে উদাহরণ সৃষ্টিকারী ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে- এমন স্থাপনাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।