মালি থেকে লেজ গুটিয়ে নিচ্ছে ফ্রান্স

মালি এবং আশপাশের দেশগুলোতে ৫ হাজার ফরাসি সেনা রয়েছে। তারা আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত। কিন্তু গত আট বছরে ফরাসিদের উপস্থিতি মালির সরকার এবং জনসাধারণের কাছে ক্রমশ অপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফ্রান্স শিগগিরই মালি থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে। বিবিসি।

মালিতে ফরাসি সেনা

২০১৩ সালে ফ্রান্স সরকার মালিতে ৫ হাজার সৈন্য পাঠায়। কারণ মালির জনগণ সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিল। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার পর গাদ্দাফির তুয়ারেগ ভাড়াটে সৈন্যরা মালিতে ফিরে আসে। তারা দেশের উত্তরের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে শুরু করে।

গাদ্দাফির অস্ত্র নিয়ে তারা আল কায়েদা এবং সংশ্লিষ্ট ইসলামপন্থীদের সাথে একটি জোট গঠন করে। তারা একসাথে মালির উত্তরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ দখল করার হুমকি দেয়। মালি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ফ্রান্সের সরকার বলেছিল, তারা মালিয়ান জনসংখ্যা এবং সেখানে বসবাসকারী ৬ হাজার ফরাসি নাগরিককে রক্ষা করতে চায়।

২০১৩ সালে মালিতে ৫ হাজার সৈন্য পাঠায় ফ্রান্স

নয় বছর আগে যখন ফরাসি সেনারা প্রথম মালিতে পৌঁছায় তখন বাহিনীটিকে উষ্ণ স্বাগত জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। দেশে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একইভাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে যোগদানকারী মালিয়ানদের সংখ্যাও বেড়েছে।

গত নয় বছরে বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজারের মতো অন্যান্য দেশেও ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকি ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্রোহীরা সাহারা মরুভূমিতে তাদের ঘাঁটি থেকে এই অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে। মালির জনগণ মনে করেছিল, ফ্রান্স একটি উন্নত সামরিক শক্তি হিসেবে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সক্ষম হবে। কিন্তু তারা তা পারেনি।

এখন মালির জনগণ মনে করে, ফ্রান্সের এই পথ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অনেকে আবার ফরাসি সেনা উপস্থিতিকে দখলদার হিসেবে অভিহিত করছে। যেহেতু অপারেশন বারখানে ৫৫ ফরাসি সৈন্য নিহত হয়েছে, তাই ফ্রান্সের মানুষও মনে করছে না মালিতে তাদের উপস্থিতি দরকার।

এদিকে, মালিতে ফরাসি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে। ফরাসি সরকার এবং মালির সামরিক জান্তার মধ্যেও তর্কবিতর্ক হয়েছে। মালির সরমারিক জান্তা ২০২০ সালের আগস্টে একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেছিল । আট বছরে দুবার তারা বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়।

চলতি ফেব্রুয়ারিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার ও ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে জান্তা। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়টির আপত্তি করলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন বলেছেন, আমরা সামরিক কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকতে পারি না।

অপারেশন বারখানে জড়িত ফরাসি সৈন্যদের আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। মালি থেকে ফ্রান্সের সেনা প্রত্যাহার এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে বলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার উদ্বিগ্ন। আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসেন ওউত্তারা সতর্ক করেছেন, এটি একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করবে।