সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হতে চান সৈনিক জান্নাতুন

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বিজিবির ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ৮৮৫ জন নবীন সৈনিক আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা করে।

জান্নাতুন রুবিনা

এই নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ হয়েছে বিজিটিসিএন্ডসিতে। প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৬৭০ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬২১ জন পুরুষ এবং ৪৯ জন নারী। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন বা ৬ বিজিবির প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের ২১৫ নবীন সৈনিকের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করেছেন নবীন সৈনিকরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুরু হয় এই প্রশিক্ষণ।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ৯৭তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবির ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে নারী সৈনিক হিসেবে যোগদান করেছেন জান্নাতুন রুবিনা। প্রশিক্ষণ ও কুচকাওয়াজ শেষে ওই মাঠেই কথা হয় তার সাথে।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, "আমি বিজিবিতে নারী হয়েও নিজের ইচ্ছায় এসেছি। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে, এদেশের নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ করা, চোরাচালান প্রতিরোধ করা এবং সীমান্ত রক্ষা করা। সীমান্ত রক্ষা করাই আমার মূল দায়িত্ব। সীমান্তের অত্যন্ত প্রহরী হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি।"

নিজের পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম। মায়ের নাম মোছা. মাজেদা খাতুন। আমরা দুই ভাই ও এক বোন। আমি মেজ। আমার বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়।”

পোড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি এইবার এইচএসসি পাশ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছি, পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে।" নারী হিসেবে  প্রশিক্ষণের অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার অনুভূতি অনেক ভালো ছিল যে, আমি একজন গর্বিত সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠেছি।"

প্রথম অস্ত্র হাতে নেওয়ার এবং গুলি ছোড়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "প্রথম অস্ত্র হাতে নিয়ে বুক ধরফর করছিলো। কিন্তু যেদিন আমি প্রথম ফায়ার করি তখন গর্ববোধ হচ্ছিলো যে, সৈনিক হিসেবে প্রথম ফায়ার করছি। ভয় ছিল মনের মধ্যে, তবে কিছু আনন্দও ছিল।"

তিনি আরও বলেন, "আমি যেহেতু সৈনিক হতে পেরেছি, আমার যেহেতু মূল দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষা করা। সীমান্তে যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের অস্ত্রের ব্যবহার করতেই হবে। সেহেতু ফায়ারে আমাকে ভালো করতেই হবে।" বাবা-মায়ের অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমরা সৈনিক জীবনে পদার্পণ করলাম। তাই বাবা-মায়ের অনুভূতিও অনেক আনন্দদায়ক।"

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ বা বিজিটিসিএন্ডসি-এর বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানের বিজিবি মহাপরিচালকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ বার বিজিটিসিএন্ডসি-এর কমান্ড্যান্ট তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান।

মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর মো. সেলিমুদ্দোজা এবং প্যারেড এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।

উল্লেখ্য, বিজিবির ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে শুরু হয়। বিজিটিসিএন্ডসি-তে প্রশিক্ষণ নেওয়া মোট ৬৭০ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬২১ জন পুরুষ এবং ৪৯ জন নারী রিক্রুট প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।একই দিনে ও একই সময়ে চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন তথা ৬ বিজিবি-এর প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের ২১৫ নবীন সৈনিকের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।

দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে বর্ণিত দুইটি ভেন্যুতে সর্বমোট ৮৮৫ জন নবীন সৈনিক আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা করেন। প্রশিক্ষণে বিজিটিসিএন্ডসি-তে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করেন বক্ষ নম্বর-৪৪২ রিক্রুট, জিডি, নুরুল হুদা মামুন এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করেন বক্ষ নম্বর-১১৮৩ রিক্রুট, জিডি মো. জুবায়ের আলী।