মায়ার জালে ৮০০ চাকরি প্রার্থীর সর্বনাশ!

রাজধানীর উত্তরখান এলাকা থেকে 'সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড' নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা করে বিপুল সংখ্যক চাকরি প্রার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ করা চক্রের ৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। আজ বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজার বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল-মোমেন।

৮০০ চাকরি প্রার্থীর সর্বনাশ!

তিনি জানান, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাকুরি দেওয়ার নামে ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে Ex-army arms body guard, House Manager/Caretaker, Security Supervisors, Security guard। এই ধরনের আকর্ষণীয় অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়।

তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে তাদের এমএলএম কোম্পানীর বিভিন্ন প্রজেক্টে সাধারন মানুষকে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তিনি আরও জানান, এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি র‍্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপি ঢাকার উত্তরখান থানার আটিপাড়া বাজারে ‘মা মনোয়ারা সুপার মার্কেটের’ ৪র্থ তলায় সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের অফিসে অভিযান পরিচালনা করে এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

তারা হলেন- মোসা. সামসুন্নাহার ওরফে মায়া (৩৩), (এমডি- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), মো. জুয়েল ভূইয়া (২৬), (জিএম- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), মো. কামরুজ্জামান ওরফে ডেনিস (২৪), (ডিজিএম- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), মোসা. ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার (২৩), (রিসিভশনিস্ট- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), মোঃ মেহেদী হাসান(২১), (মার্কেটিং অফিসার- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), মো. আল মামুন ওরফে মাসুদ (২১), (মার্কেটিং অফিসার- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ) এবং মো. তাজবির হাসান ওরফে লোহান (১৯), (মার্কেটিং অফিসার- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ)।

এ সময় অভিযুক্তদের নিকট হতে ৫ টি ভূয়া নিয়োগপত্র, ৮০টি জীবন বৃত্তান্ত ফরম, এক বক্স ভিজিটিং কার্ড, একটি মানি রিসিট বই, ১০১টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, ২টি সীল ১৫ টি আইডি কার্ড, ৩টি রেজিষ্টার, ৮টি মোবাইল ফোন, ৮ পাতা চাকুরি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট এবং নগদ ২০ হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্তদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই এমএলএম কোম্পানীটির নাম “সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড” এবং রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় তাদের অফিস। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। ''Sinthiya Security Service Limited'' হলো তাদের Facebook page। এই চক্রটি তাদের কোম্পানীতে ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, এবং তাদের অধীনে বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক, এটিএম বুথ, থ্রী স্টার এপার্টমেনট, গার্মেন্টস-টেক্সটাইল, মিল-ফ্যাক্টরী, বিদুৎ পাওয়ার প্লান্ট, মেট্রোরেল হেড অফিস, চায়না প্রজেক্টসহ আরও কিছু জাতীয়/আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে কিছু কর্মচারী নিয়োগের জন্য তাদের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিত।

তাদের অফিস হতে চাকুরী প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বলা হয়। নির্দিষ্ট তারিখে চাকুরি প্রার্থীরা ইন্টারভিউ এর জন্য অফিসে আসার পর তাদের নিকট হতে ভর্তি ফরম, ট্রেনিং, এবং আইডি কার্ড বাবদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা জামানত আদায় করা হতো এবং তাদের জানানো হতো পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০/১৫ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হবে।

পরবর্তীতে তারা সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকুরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকুরি প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন প্রদান করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হতো। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা কোম্পানীটির প্রতারণার বিষয়ে বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

র‍্যাব জানায়, অভিযুক্তরা বিগত ৬ মাসে প্রায় ৭০০/৮০০ জন চাকুরি প্রার্থীকে তাদের কোম্পানীর নিয়োগ ফরম পূরণ করেছে। তাদের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়। গত ৮ মাস যাবৎ সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানী চলছিলো কিন্তু তারা কোন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে বলে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি ।

র‍্যাব জানায়, অভিযুক্ত সামসুন্নাহার ওরফে মায়া এবং মো. জুয়েল ভূইয়া একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। সামসুন্নাহার ওরফে মায়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মো. জুয়েল ভূইয়া মহাব্যবস্থাপক হিসেবে “সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ” এ কাজ করে।

অভিযুক্ত সামসুন্নাহার ওরফে মায়া গত ২০২০ সালে রাজধানীর ঢাকার দক্ষিণখান থানার মধ্য আজমপুর, সংগ্রামী স্মরনী রোড বি এলার্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড এর মার্কেটিং অফিসার পদে চাকুরি করত। পরবর্তীতে গত ৮ মাস যাবৎ “সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ” নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করে এবং চাকুরী প্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রী/জনগণকে টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছে। আরও উল্লেখ্য যে, তাদের কোম্পানী আইন সম্পর্কে কোন রকম ধারনা নেই এবং এ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দাবী করলেও তাদের কোন ধরনের সরকারি অনুমোদন কিংবা রেজিষ্ট্রেশন নাই।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।