সাদা দাঁত পাশবিকতার প্রতীক, আভিজাত্য কালো দাঁতে!

প্রাচীনকাল থেকে সাদা ঝকঝকে দাঁতের প্রশংসাই শুনে আসছে সবাই। অনেকে হাসিতে নাকি মুক্তো ঝরে, সেটাও নিশ্চিতভাবে সাদা দাঁত। কিন্তু জাপানে একটি সময় অবস্থা ছিল এর পুরো বিপরীত। সে সময় সাদা দাঁতকে মনে করা হতো পাশবিকতার প্রতীক। আর সৌন্দর্য, আভিজাত্য সবই কালো দাঁতে। তার কদরই ছিল আলাদা!

কালো দাঁত

প্রেমিকা বা নববধূর কুচকুচে কালো দাঁতের সঙ্গে ভ্রমরের তুলনা করে কবিতা রচনা করতেন কবিরা। সব মিলিয়ে সাদা দাঁত কালো করার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল নারীমহলে। রাজ দরবারের অভিজাত মানুষদের মধ্যে তো এই প্রথা আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। ক্রমে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে।

প্রাচীন জাপানে এ প্রথা প্রচলিত ছিল প্রায় ১৫০ বছর আগেও। সে সময় নারীর রূপের অন্যতম মাপকাঠি ছিল কালো কুচকুচে দাঁত। হান বংশের শাসনকাল থেকে ইদো বংশের শাসন পর্যন্ত দীর্ঘ ৯০০ বছর ধরে চলেছিল এই প্রথা। এর আভিধানিক নাম ছিল ‘ওহাগুরো’। জাপানি ভাষায় ‘হা’ শব্দের অর্থ দাঁত এবং ‘কুরো’ শব্দের অর্থ কালো। আর এই দুইয়ের পূর্বে সম্মানসূচক ‘ও’ যোগ করে শব্দটি তৈরি।

সাদা দাঁতের আকর্ষণ সর্বত্রই

প্রাচীন জাপানের মানুষেরা মনে করতেন, মুখের ভেতর ঝকঝকে সাদা দাঁতের সারি আসলে পাশবিক প্রবৃত্তির ইঙ্গিত দেয়। সে সময়ে জাপানে চকচকে কালো রঙের আবরণকে সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হত। ফলে দাঁতের রং হিসেবে কালোকেই বেছে নিলেন সমাজের উচ্চস্তরের মানুষেরা। আমজনতাও এই প্রথা অনুসরণ করতে শুরু করল।

দাঁতকে কালো রঙে রাঙানো ছিল যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি। জানা যায়, ভাত থেকে তৈরি জাপানি মদ বা সাকে, চা ও ভিনিগারের মিশ্রণে লোহার পাত্রে ডুবিয়ে রাখা হত বেশ কয়েকদিন। লোহার সংস্পর্শে থেকে চা ও ভিনিগারের এই মিশ্রণ কালো রং ধারণ করলে এর সঙ্গে মেশানো হত হরিতকীর মিহি গুঁড়ো। এরপর ভিনিগার ও হরিতকীর গন্ধ ঢাকতে মেশানো হত লবঙ্গ ও দারুচিনির নির্যাস। মিশ্রণটির নাম ছিল কানেমিজু। চকচকে কালো দাঁত পাওয়ার জন্য প্রতিদিন অন্তত একবার কানেমিজু দিয়ে দাঁত রাঙাতে হতো।

তো, দাঁতের রঙ তো কালো হতো, কিন্তু তার স্বাস্থ্যের কী খবর? ওই দিকটা ছিল আরো ভালো। কারণ ওই তিতকুটে মিশ্রণের গুণে দাঁতে জীবাণু সংক্রমণ ঘটত না একেবারেই। ফলে বয়স বাড়লেও দাঁত থাকত অটুট। সে অবস্থা অবশ্য আজ আর নেই। সাদা ঝকঝকে দাঁতই এখন বিশ্বের সার্বজনীন পছন্দ।