‘গলাকাটা মোশাররফ’ বাহিনীর নেপথ্যের কাহিনী

রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. মোশারফ ওরফে লম্বু মোশারফ ওরফে গলাকাটা মোশারফ ওরফে গাংচিল মোশারফ (৪৫) ও তার ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-২। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গোলাবারুদ ও দেশীয় অস্ত্র।

গলাকাটা মোশাররফ বাহিনী

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. বিল্লাল ওরফে মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে চোরা বিল্লাল (৩০), মো. মোহন ওরফেবাইক মোহন (৩১), সাহাবুদ্দিন সাবু ওরফে সাবু ওরফে জলদস্যু সাবু (৪৪), মো. রুবেল ওরফে ডাকাত রুবেল ওরফে ট্রলার রুবেল (৩৩) এবং মো. সুমন মিয়া ওরফে সুমন হোসেন (৩০)।

র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানিয়েছেন। র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তার পার্শ্ববর্তী আমিনবাজার, তুরাগ, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের সন্ত্রাসী দলের সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০ জন। লম্বু মোশারফের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এসব এলাকায় তারা জমি দখল, হাউজিংয়ে চাঁদাবাজি, নৌপথে চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করতো। 

যেভাবে ‘গলাকাটা মোশাররফের’ দলে তারা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে চোরা বিল্লাল ২০০৬ সালে মুন্সিগঞ্জ থেকে পরিবারের সাথে ঢাকায় আসে। ঢাকায় এসে সে গার্মেন্টসে চাকরি ও বিভিন্ন গাড়ির হেলপার হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় লম্বু মোশাররফের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং লম্বু মোশাররফের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত হয়। সে লম্বু মোশারফের নির্দেশে মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন সস্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।

সিধকাটা, গৃহস্থলির তালা ভাংগাসহ অন্যান্য চৌর্যবৃত্তিতে পারদর্শী হওয়ার কারণে সে ‘চোরা বিল্লাল’ হিসেবে পরিচিতি পায়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।

গ্রেপ্তারকৃত মোহন ওরফে বাইক মোহন লম্বু মোশাররফের অন্যতম সহযোগী। সে ২০১০ সালে ভোলা হতে ঢাকায় এসে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস শুরু করে। সে বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকরি, রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে মোটরবাইক চালানোর কাজ করতো। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরির সময় লম্বু মোশাররফের দলে যোগ দেয়। চাঁদা আদায়সহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার সময় লম্বু মোশাররফ মোহনের বাইকে চলাচল করতো বলে সে বাইক মোহন হিসেবে পরিচিত। ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮টির অধিক মামলায় সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।

এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত সাহাবুদ্দিন সাবু ওরফে জলদস্যু সাবু লম্বু মোশাররফের অন্যতম প্রধান সহযোগী। পূর্বে সে মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। ২০১৭ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময়ে লম্বু মোশাররফের সাথে যোগ দেয়। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে বিভিন্ন ট্রলার, জাহাজ চলাচলের সময় এবং রুট তার নখদর্পনে থাকার কারণে সে জলদস্যু সাবু হিসেবে পরিচিতি পায়।

লম্বু মোশাররফের নির্দেশে সে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিভিন্ন মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণের সাথে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে সাভার ও মোহাম্মদপুর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা, মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।

অপর আসামি মো. রুবেল ওরফে ডাকাত রুবেল ওরফে ট্রলার রুবেল লম্বু মোশাররফের গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে ২০০৬ সাল থেকে মোহাম্মদপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ট্রলার বা নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। ২০১৮ সালে লম্বু মোশাররফের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে সে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর বিভিন্ন মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির সময়ে সে নৌকা বা ট্রলার চালনা করতো বলে ট্রলার রুবেল হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধে সাভার ও মোহাম্মদপুর থানায় ৩টি মামলা রয়েছে এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।

অন্যদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া মো. সুমন মিয়ার জন্ম ঢাকার বাবুবাজার এলাকায়। সে বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকরি ও ডিসের লাইনে চাকরি করতো। ২০২০ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরির সময় লম্বু মোশাররফের দলে যোগ দেয় সে। লম্বু মোশাররফের নির্দেশে বিভিন্ন স্থান হতে মাদক সংগ্রহ ও মাদক পৌঁছে দেয়ার কাজ করতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মাদক ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে। সেও বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।