ইমরান: ন্যাটোকে সহযোগিতায় শুধুই ক্ষতি

ন্যাটোতে যোগদান ইস্যুতেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া। সংস্থাটিতে যোগ দেয়ার আগেই ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে দেশটিকে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে রুশ বাহিনী। আলোচিত এই ন্যাটোর ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্তব্য করেছেন, ন্যাটোর সঙ্গে যে কোনো সহযোগিতা ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনে না। এ সময় তিনি অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পাকিস্তানের স্বাধীন অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন।

ইমরান খান

ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোতে সফর এবং ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানাতে পাকিস্তানের প্রতি ন্যাটোর আহ্বান জানানোর প্রতিক্রিয়ায় ইমরান খান বলেন, ন্যাটোর ব্যাপারে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা খুবই বাজে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি ন্যাটোর সাথে সহযোগিতার ফলে পাকিস্তানের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হয়নি।

পাক প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ন্যাটোর সাথে কাজ করেছিল পাকিস্তান। ওই সহযোগিতার কারণে পাকিস্তানের ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারের। এছাড়া অন্য ক্ষতি তো আছেই।

জেলেনস্কি ও পুতিন

পাকিস্তান সরকারের কাছে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের লেখা চিঠির তীব্র সমালোচনা করে ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তান যুদ্ধে ন্যাটোকে সহযোগিতা করার কারণে ইসলামাবাদের প্রশংসা করা উচিত ছিল। কিন্তু যুদ্ধে ব্যর্থতার জন্য তারা উল্টো পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছে। এ অবস্থায় ন্যাটো আবারও আশা করছে, পাকিস্তান সরকার চোখ বন্ধ করে ন্যাটোর প্রতিটি আবদার রক্ষা করবে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

আফগান যুদ্ধে ন্যাটোকে সহযোগিতা করার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে পাকিস্তানের। এই সহযোগিতার ফলে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানেও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর আগে পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় সন্ত্রাসীর অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে হামলা শুরু করলে অনেকে প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানে প্রবেশ করে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। এতে ন্যাটো যেমন সেসব অঞ্চলে নির্বিচার হামলা চালিয়েছে, তেমনি পাকিস্তানেও ছড়িয়ে পড়েছে সন্ত্রাস। সবদিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তান সে সময় ন্যাটোকে সব রকম সহযোগিতা দিয়েছিল। এতে দেশের অভ্যন্তরে সরকার জনগণের বিরোধিতার মুখে পড়ে। আবার জানমালের দিক দিয়েও ক্ষতির মুখে পড়ে দেশটি। কিন্তু ২০ বছর আফগানিস্তান অবস্থান করে প্রায় পরাজিত অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সময় পরিস্থিতির জন্য আমেরিকা ও ন্যাটো পাকিস্তানকে দোষারোপ করে।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অবশ্য শুরু থেকেই ন্যাটোকে সহযোগিতার বিরোধী ছিলেন। ইউক্রেন ইস্যুতেও তাই ন্যাটোর বিরোধীপক্ষ রাশিয়ার দিকেই তাদের সমর্থন। জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে পাকিস্তান ভোট দানে বিরত ছিল। এছাড়া হামলা শুরুর সময়ও ইমরান খান রাশিয়া সফরে ছিলেন। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের সমর্থন রাশিয়ার দিকেই থাকছে।