আপনি পড়ছেন

ঋণের চাপে ও আর্থিক সংকটে খুব দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি, জরুরি ওষুধ ও খাদ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটির সরকার। কাগজ কিনতে না পারায় বাতিল করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আরও ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এবং অন্যান্য ঋণদাতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা।

sri lanka debtঋণের চাপে তলিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা, ফাইল ছবি

আইএমএফ, চীন ও জাপান সরকারের কাছে বিপূল পরিমাণ দেনা জমেছে শ্রীলঙ্কার। এদিকে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষ হয়ে যাওয়ায় যথাসময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ঋণদাতা পক্ষগুলো ঋণ পুনর্গঠন বা নতুন করে ঢেলে না সাজালে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঋণখেলাপি হয়ে পড়বে দেশটি। এমন হলে বৈদেশিক বাণিজ্য ও কেনাকাটায় বড় ধরণের আস্থার সংকটে পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার এ দ্বীপরাষ্ট্র।

শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রমেশ পাথিরানা বলেছেন, ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে শীঘ্রই আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। স্বল্প সময়ে সহজ শর্তে ঋণ অথবা অনুদান দিতে আইএমএফকে চিঠি লিখেছে শ্রীলঙ্কা। মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে দেনদরবার করার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জি. এল. পেইরিজ, বিচার মন্ত্রী মোহাম্মদ আলি সাবরি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর অজিথ নিভার্দ চেবরাল, অর্থ সচিব এস. আর. আত্তিগাল্লিকে নিয়ে গঠিত কমিটিকে আইএমএফের সঙ্গে ভবিষ্যত লেনদেন ও চুক্তি তদারকির জন্য কোনো আন্তর্জাতিক আইনি সেবা প্রতিষ্ঠান খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে, কিছু ঋণ মওকুফ ও পুনর্গঠনের জন্য চীনের সঙ্গে দেনদরবার করছে শ্রীলঙ্কা। জানুয়ারি মাসে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই কলম্বো সফরের সময় শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়। এরইমধ্যে আবার চলতি সপ্তাহে চীনের কাছে আড়াইশ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কায় নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূত কী ঝেনহং সোমবার কলম্বোয় সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, ১০০ কোটি ডলার নগদ ঋণ ও ১৫০ কোটি ডলার বায়ার্স ক্রেডিট (বাকিতে কেনাকাটার সুবিধা) চেয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রয়োজনের তীব্রতা মাথায় রেখে চীন সরকার জরুরি ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কার প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে তিনি জানান।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসা ক্ষমতায় আসার পর থেকে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ দ্রুত কমেছে। ২০১৯ সালে তার ক্ষমতায় আসার কালে রিজার্ভ ছিল ৭৫০ কোটি ডলার। গত ফেব্রুয়ারি মাস শেষে রিজার্ভ নেমে ঠেকে ২১০ কোটি ডলারে। মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি দুটিই বাড়ছে ভীষণভাবে। গত ১৪ দিনে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রূপির মান কমে ঠেকেছে ২০১ থেকে ২৮০-তে। অর্থাৎ ১৪ দিন আগে প্রতি ডলার সমান ছিল ২০১ লঙ্কান রুপি, এখন হয়েছে ২৮০ লঙ্কান রুপি!

পণ্য মূল্য বাড়ছে হু হু করে। জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে দাঙ্গা ও লুটপাট ঠেকাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। ১২ কেজির প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য গতকাল মঙ্গলবার একলাফে আগের চেয়ে ১ হাজার ৪০০ রুপি বাড়ানো হয়েছে।

বিচার বিবেচনা ছাড়াই বৈদেশিক ঋণ নেওয়া এবং ঋণের অর্থ ব্যয় করার কারণে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। স্বাভাবিকভাবেই চীন, জাপান ও আইএমএফের কাছে দেনার পাহাড় জমেছে। একের পর এক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে নাজেহাল দেশটির সরকার। এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে তাতে শুধু ঋণখেলাপি নয়, দেউলিয়াও হয়ে পড়তে পারে রাষ্ট্রটি।

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন। কোভিড মহামারির কারণে প্রবলভাবে হোঁচট খেয়েছে পর্যটন খাত। অনেকগুলো কলকারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানি কমে গেছে ৭৫ শতাংশ। এ থেকেও ধাক্কা খেয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন। কেবল গত দুই বছরে চীন থেকে ২৮০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এখন চীন সরকারও শ্রীলঙ্কাকে অর্থায়ন করতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন কোনো কোনো পর্যবেক্ষক।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কও খুব মসৃণ রাখতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসা প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্ত হাতে দমন করেছিলেন। সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসা। মহিন্দা সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উষ্ণ ছিল বলে ভাবা হয়। কিন্তু গোতাবি সরকার সম্পর্কের সে ধারাবাহিকতা রাখেনি।

গত সপ্তাহে উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় চীনের অর্থায়নে চলমান বিদ্যুৎ খাতের কয়েকটি প্রকল্পের কাজ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়। কলম্বোয় সংবাদ সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসার ভাই অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসা গত বৃহষ্পতিবার নয়াদিল্লি সফর করেছেন। সফরকালে তিনি ভারতের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের বায়ার্স ক্রেডিট চুক্তি করেছেন।

বাকিতে খাদ্য, ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য শ্রীলঙ্কাকে ‘স্বল্পকালীন’ ঋণ দিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ককে চীন সরকার কীভাবে দেখছে, জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত কী ঝেনহং কোনো মন্তব্য করেননি। তবে আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, চীন কখনো শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নেবে না।

জাফনা ও পক প্রণালীতে চীনের অর্থায়নে চলমান বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজ শ্রীলঙ্কা বন্ধ করে গত সপ্তাহে। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে একই অঞ্চলে কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) ও আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক সম্পর্কে এই চীন-ভারত ভারসাম্য রাখার দায় শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিস্থিতি হয়তো আরও জটিল অথবা সহজ করবে।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.