পাকিস্তানের রেকর্ড জয়, বাংলাদেশের মুক্তি

প্রথম ইনিংসে যখন প্রায় সাড়ে তিন শ রান হয়ে যায়, দ্বিতীয় দলটার আর কিছু করার থাকে না। কিছু করতে পারলে সেটা হয় ইতিহাস, ঝড় ওঠে রেকর্ড বইয়ে। বৃস্পতিবার রাতে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তান দুটোই করল এক সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেওয়া রানের পাহাড় স্বাগতিকরা টপকে গেল প্রায় অবিশ্বাস্যভাবেই। তাতে মুক্তি মিলল বাংলাদেশের।

জয়ের নায়ক ইমাম-উল-হক এবং বাবর আজম

বেন ম্যাকডারমটের স্বপ্নের সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে আট উইকেটে ৩৪৮ রানের পাহাড় গড়ে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়ায় ইমাম-উল-হক ও বাবর আজমের শতকের সুবাদে পাকিস্তান (৩৫২/৪) রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় এক ওভার হাতে রেখেই। ছয় উইকেটের এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতায় ফিরল পাকিস্তান। আগামী শনিবার একই ভেন্যুতে অলিখিত ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৩২৬ রানের চ্যালেঞ্জ তারা পেরিয়ে গিয়েছিল তিন উইকেট ও এক বল হাতে রেখে। একদিনের ক্রিকেটে ওটাই ছিল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। বিব্রতকর সেই রেকর্ড থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিল অস্ট্রেলিয়া।

শাহিন শাহ আফ্রিদির উদযাপন

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছে টপ অর্ডার। তিনে নেমে ম্যাকডারমট তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১০৮ বলে ১০৪ রানে আউট হন তিনি। ইনিংস সাজান ১০টি চার ও চার ছক্কায়। তার সঙ্গী ট্রাভিস হেড অবশ্য সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে নিরাশ করেছেন। ৭০ বলে ৮৯ রানের ইনিংস তিনি গড়েন ছয়টি চার ও পাঁচ ছক্কায়।

টপ অর্ডারের এনে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রানের চাকার গতি ধরে রাখেন মার্নাস লাবুশেন ও মার্কাস স্টয়নিস। লাবুশেন ৪৯ বলে ৫৯ ও স্টয়নিস ৩৩ বলে ৪৯ রানে আউট হন। শেষ দিকে শন অ্যাবট ১৬ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। কিন্তু পাকিস্তানের দারুণ ব্যাটিংয়ে বিফলে গেছে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন পেসার শাহিন আফ্রিদি। দুটি শিকার মোহম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের। তবে উইকেট পেলেও লক্ষ্যমাত্রা নাগালে রাখতে পারেননি তারা। সেই ব্যর্থতা পুষিয়ে দেন টপ অর্ডারের ব্যাটাররা। হিমালয় ডিঙাতে গিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমাম ও বাবর।  ওপেনার ফখর জামান ৬৪ বলে সাতটি চার ও দুই ছক্কায় ৬৭ রান করে ফিরে যান।

তাতেই ভাঙে পাকিস্তানের ১১৮ রানের শুরুর জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক বাবরকে নিয়ে আরেকটি শতরানের জুটি গড়েন ইমাম। ২২৯ রানে দলের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন ইমাম। ৯৭ বলে ছয়টি চার ও তিন ছক্কায় ১০৬ রানে ফেরেন পাক ওপেনার। সিরিজে এটা তার টানা দ্বিতীয় শতক। পরে তার পদাঙ্ক অনুকরণ করেন বাবর।

৮২ বলে ১১টি চার ও এক ছক্কায় ১১৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক। দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসেন ম্যাচ সেরা হওয়া বাবর। পরে ইমাম-বাবরদের অসমাপ্ত কাজটা সারেন মোহাম্মদ রিজওয়ান (২৩), খুশদিল শাহ (২৭*) ও ইফতিখার আহমেদ (১১*)। পাকিস্তানের পতন হওয়া চার উইকেটের দুটি নেন অ্যাডাম জাম্পা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

টস: বাবর আজম (পাকিস্তান)।
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভার ৩৪৮/৮ (হেড ৮৯, ম্যাকডারমট ১০৪, লাবুশেন ৫৯, স্টয়নিস ৪৯; আফ্রিদি ৬৪/৪, ওয়াসিম ৫৬/২)।

পাকিস্তান: ৪৯ ওভার, ৩৫২/৪ (ফখর ৬৭, ইমাম ১০৬, বাবর ১১৪; জাম্পা ৭১/২, স্টয়নিস ২৩/১)।

ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।
ম্যাচ সেরা: বাবর আজম (পাকিস্তান)।

তৃতীয় ওয়ানডে: ২ এপ্রিল, ২০২২।