৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ: মোটরসাইকেল এখন নতুন আতঙ্ক!

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বা সড়কগুলো ভয়ংকরভাবে অনিরাপদ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়কে দায়ী করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে ফিটনেসবিহীন যান, অদক্ষ চালক এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা। এর সঙ্গে বর্তমানে মোটরসাইকেলকে নতুন করে আতঙ্ক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি ফ্লাইভারে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক মোটরসাইকেলআরোহী ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় বিষয়টি সামনে এসে।

মোটরসাইকেল চালানো, ফাইল ছবি

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক বছর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশে নজিরবিহীন আন্দোলন গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তাদের দাবির মুখে একটি আইন করে সরকার। তবে কাগজে থাকলেও বাস্তবে সেই আইনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। আইন হলেও তার সুফল পায়নি মানুষ, কারণ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আসেনি। অনুমোদনহীন যান প্রতিদিন রাস্তায় নামছে, সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিলও থেমে নেই।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে দেশে ৫৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭৯ জন মানুষ। এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ২২১ জন, যা মোট মৃত্যুর ৩৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে মোটরসাইকেলকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, ফাইল ছবি

এ বিষয়ে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের কারণে মৃত্যুর হার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃতদের বেশিরভাগের বয়স ১৪ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। বাহনটির অধিকাংশ চালক কিশোর-তরুণ হওয়ায় নিজেরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, অন্যদেরও দুর্ঘটনার শিকার করছেন।

এসব কিশোর-তরুণ বাইকার বেপরোয়া গতিতে, ট্রাফিক আইন না জেনে অথবা জানলেও তা না মেনে দ্রুতগতির বাহনটি চালাচ্ছেন। তাদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, যাদের আছে তাদের অনেকেও এটির পাওয়ার যোগ্য নয়। যানজটের জন্য এই বাহনটি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। অন্যান্য দেশে যেখানে বাইক চালানোকে নিরুৎসাহিত করা হয়, সেখানে বাংলাদেশে উৎসাহ দেওয়া হয় ৷ এমনকি কিস্তিতেও মেলে মোটরসাইকেল, যা অন্য সব যানবাহনের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, বলছেন সাইদুর রহমান।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রীকেও তার পরিবার স্কুটি চালাতে বারণ করেছিল। কিন্তু গণপরিবহন সংকট এবং যানজটের কারণে মোটরসাইকেল ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা এড়াতে হলে যারা বাহনটি চালাতে সক্ষম, বিআরটিএ’র উচিত কেবল তাদেরই লাইসেন্স দেওয়া।

সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে মোটরসাইকেল চালকের প্রকৃত সংখ্যা কত, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই তাদের কাছে। কেবল নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের হিসাব আছে। মোটরসাইকেল এখন বেশি ব্যবহার করায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

অবশ্য সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং ভাড়ি যানের চালকদের অদক্ষতাকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী।