ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে কট্টরপন্থী মারিন ল পেনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে।

মূল লড়াই হবে এমানুয়েল মাখোঁ ও মারিন ল পেনের মধ্যে

ভোটগ্রহণ শেষের পরপর বুথফেরত জরিপের ফলাফল বেরোবে। ধারণা করা হচ্ছে, মাখোঁ ও ল পেনই প্রথম পর্বের নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। সেক্ষেত্রে এ দুজন আগামী ২৪ এপ্রিল নির্বাচনের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এমানুয়েল মাখোঁর জন্য খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। প্রচারণার শেষদিকে এসে জনমত জরিপে তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন ল পেন।

কোভিড-১৯ এর অভিঘাত সামলে ফরাসি অর্থনীতির দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো, ইউক্রেন ইস্যুতে সক্রিয় কূটনীতি আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনৈক্যের সুবাদে কয়েক সপ্তাহ আগেও জনমত জরিপে মাখোঁর সহজ জয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু দেরিতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করা, বড় ধরণের একটিমাত্র জনসভা করা, চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির মতো অজনপ্রিয় ইস্যু আঁকড়ে থাকার কারণে ভোটের রাজনীতিতে তিনি পিছিয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন সমর্থকরা।

অন্যদিকে, অভিবাসন-বিদ্বেষী, মুসলিম-বিদ্বেষী ও ইউরোপ-বিমুখ কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত ল পেন প্রচারণার শুরু থেকেই সারা ফ্রান্স চষে বেড়িয়েছেন। এর আগে দুবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়ে হেরেছেন ল পেন। এবার তাই অভিবাসন, ইসলাম ইত্যাদি ইস্যু চেপে গিয়ে মাসজুড়ে তিনি আলোকপাত করেছেন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মতো জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে।

রক্ষণশীল ভোটব্যাংকে ল পেনের মতো আরেক দাবিদার এরিক জিমুর। সাম্প্রতিক সময়ে জিমুরের জনপ্রিয়তায় ধস নামায় আরও জোরালো হয়েছে ৫৩ বছর বয়সী এ নারীর জয়ের সম্ভাবনা।

বেশিরভাগ জনমত জরিপে বলা হয়েছে, ল পেন এগিয়ে এলেও নির্বাচনের প্রথম পর্বে মাখোঁ তার চেয়ে বেশি ভোট পাবেন এবং এ দুই প্রার্থী রান-অফ নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন। তবে কয়েকটি জরিপ বলছে, মাখোঁ এবার কিছুটা ঝুঁকিতে আছেন। বিশেষত, বামপন্থী ভোটারদের অনেকে এবার তাকে আগের মতো ঢালাও সমর্থন দিবেন না। জরিপে উত্তরদাতা অনেকে বলেছেন, গতবারের মতো কেবলমাত্র ল পেনের প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতে তারা মাখোঁকে ভোট দিবেন না।

এদিকে, জনমত জরিপে তৃতীয় স্থানে থাকা কট্টর বামপন্থী প্রার্থী জঁ-লুক মেলেনচনের সমর্থকরা নানা মত ও পথে বিভক্ত বামপন্থী ভোটারদের অনুরোধ করেছেন তাদের প্রার্থীকে একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য। ভোটাররা এ আহ্বানে সাড়া দিলে বিরাট চমক সৃষ্টি হতে পারে।

ফ্রান্সের বিপুল সংখ্যক ভাসমান ভোটার কোনদিকে ঝুঁকেছেন সেটা প্রথম দফা ভোটগ্রহণ শেষ হবার কিছুক্ষেণের মধ্যে বুঝা যাবে। তবে ল পেন কখনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের এত কাছাকাছি আসেন নি বলে মন্তব্য করেছেন হ্যারিস ইন্টারঅ্যাকটিভ জরিপের জঁ-দানিয়েল লেভি।

নির্বাচনের ফলাফল যে কোনোদিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। বৃহস্পতিবার এক জনসভায় ল পেন তার সমর্থকদের বলেছেন, ‘সবকিছু সম্ভব’। একইভাবে, তার দুদিন আগে মাখোঁ নিজের সমর্থকদের বলেছেন, ‘ব্রেক্সিটসহ বিভিন্ন নির্বাচনে কী হয়েছে দেখুন। যেটা অসম্ভব মনে হয়, সেটাই ঘটে যেতে পারে।’