টিআইবি: টিকার ব্যয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা গরমিল

করোনা মোকাবেলায় সরকারি টিকা কার্যক্রমের অর্থ ব্যয়ে ‘স্বচ্ছতার ঘাটতি’ রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআইবি। এতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের কথা সরকার বললেও প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার গরমিল রয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির।

টিকা ও টিআইবি

টিআইবির ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, টিকার প্রাক্কলিত ক্রয়মূল্য ও টিকা ব্যবস্থাপনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলেছে সরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে মোট প্রাক্কলিত খরচ ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেওয়া হিসাবের অর্ধেকের কম এটি।

সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সরকারিভাবে প্রায় ৯ দশমিক ২ কোটি ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। কোভ্যাক্স কস্ট শেয়ারিংয়ে কেনা হয় ৮ দশমিক ৭ কোটি ডোজ আর বিভিন্ন দেশ ও কোভ্যাক্সের অনুদান হিসেবে প্রায় ১১ দশমিক ৭ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

সে হিসেবে প্রতিডোজ কোভিশিল্ড ৫ ডলার বা ৪২৫ টাকা, সিনোফার্ম ১০ ডলার বা ৮৫০ টাকা এবং কোভ্যাক্স কস্ট শেয়ারিং ৫ দশমিক ৫ ডলার বা ৪৬৭.৫ টাকা পড়ে। এ ক্ষেত্রে আনুমানিক ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৫৪.৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি টিকা ক্রয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এ ছাড়া ২০২১ সালের জুলাইয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিডোজ টিকার জন্য ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে ২০২২ সালের ১০ মার্চ টিকা কার্যক্রমে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সরকারি তথ্য বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকাপ্রতি দুই ডলার বা ১৭০ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এছাড়া কোভ্যাক্সের হিসাবের টিকাপ্রতি ০.৮৪ ডলার বা ৭১.৪ টাকা থেকে ০২.৬৪ ডলার বা ২২৪.৪ টাকা ব্যয় ধরা হয়।

এসব হিসাব থেকে টিকা কার্যক্রমে প্রাক্কলিত মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৯.৬ কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার ৪৬৭.৩ কোটি টাকা। আর উল্লিখিত টিকার প্রাক্কলিত ক্রয়মূল্য ও টিকা ব্যবস্থাপনার ব্যয় দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে একটি দেশ থেকে টিকার ক্রয়মূল্য গোপন রাখার শর্ত থাকলেও সকল উৎসে টিকার ব্যয় ও টিকাদানে খাতভিত্তিক ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

গবেষণাটি ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। এতে ৪৩টি জেলায় ১০৫টি টিকাকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হয়, যার মধ্যে ৬০টি অস্থায়ী ও ৪৫টি স্থায়ী কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ৪৩ জেলার ৪৮টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৭১ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।