প্রতারণার টাকায় ১৩০ বিঘা জমি, ৩০০ কোটি টাকা ব্যাংক লোন!

২০০৯ সালে উচ্চশিক্ষা নিতে অস্ট্রেলিয়ায় যান বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের জিয়াউদ্দিন ওরফে জামান। সেখানেই শিখে ফেলেন প্রতারণার নানা কৌশল। সবজির ব্যবসার নামে এক দেশের টাকা আরেক দেশে পাচারের কৌশল রপ্ত করেন। এরপর হংকং, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরছেন জামান।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার জিয়াউদ্দিন ওরফে জামান

২০১৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে শুরু করেন বিশাল প্রতারণা। নিজেকে পরিচয় দেন ১২টি প্রতিষ্ঠানের এমডি ও চেয়ারম্যান হিসেবে। নানা ধরনের ব্যবসার নাম করে হাতিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এসব টাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিনেছেন ১৩০ বিঘা জমি। এসব জমি ব্যাংকের কাছে দেখিয়ে লোন নিয়েছেন ৩০০ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক সময়ে জামানের বিরুদ্ধে কয়েকজন ভুক্তভোগী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন। বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক মামলাও দায়ের করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।

এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে মো. জিয়াউদ্দিন ওরফে জামানকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৬ বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জালনোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

এছাড়াও ওমানে অর্থ পাচারের তথ্যাদি, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ‘জাপানে তৈরি’ স্টিকার, ৫ ধরণের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেওয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করে র‍্যাব।

জিয়াউদ্দিন নিজেকে ১২টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে বলে ভুয়া প্রচারণা চালান। বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে প্রতারিত করার বিষয় জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামান ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন। এরপর  ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছে কয়েক শতকোটি টাকা আত্বসাৎ করে।

এভাবে ব্যবাসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে আনুমানিক শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ জামান। মূলত ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপণ, ভুয়া কোম্পানি ওয়েবসাইট, বিদেশে ভুয়া সাজানো ফ্যাক্টরিতে আকৃষ্ট হয়ে জিয়াউদ্দিনকে সরলভাবে বিশ্বাস করে ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে।

জামানের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র‍্যাব জানায়, ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেন তিনি। দুটি দেশের মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে ফোসান সিরামিক লিমিটেড, হাইটেক সিরামিক লিমিটেড ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে অধিক মূল্য দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেন। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছেন তিনি।

র‍্যাব আরও জানায়, নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে টাইলসে ফোসান সিরামিকের লোগো খোদাই করে নিজের ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি বলে প্রচার করতেন জামান। নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যবসায়ী হিসেবে।

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি এবং বিদেশের ৩টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে জিয়াউদ্দিন ওরফে জামানের। এছাড়াও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৭০টিও বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ নানা অপরাধে ২০টিও বেশি মামলা রয়েছে।