সুদের জন্য নবজাতক বিক্রি: উদ্ধার করল পুলিশ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সুদের টাকা শোধ দিতে না পারায় এক দম্পতির একদিনের নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছিল মহাজন। বছরখানেক আগে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া সেই শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটি কিনে নেওয়া রানু বেগমকেও (৪০) আটক করা হয়েছে।

মানচিত্রে নারায়ণগঞ্জ

আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান। তিনি জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্তে নামে পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গত রাতে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের দক্ষিণপাশায় অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় শিশুটিকে কিনে নেওয়া রানু বেগমকে আটক করার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, রানু বেগম মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের দক্ষিণপাশের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী। তাদের সংসারে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। ছেলেটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাগনি সুমার মাধ্যমে একমাসের শিশুটিকে কিনে নেন তারা। শিশু উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

রানী আক্তার ও উদ্ধার হওয়া শিশু

উদ্ধার হওয়া শিশুটির মা রানী বেগম জানান, তারা ফতুল্লার আলীগঞ্জ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ’র কলোনিতে থাকেন। তার স্বামীর নাম হান্নান চৌকিদার। তারা কলোনির লাকি বেগম নামের এক মহাজনের কাছ থেকে দুই বছর আগে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকার সুদ হিসেবে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা শোধ দিয়েছেন।

এখনো ১ লাখ ৩ হাজার টাকা পাবেন বলে দাবি করছেন মহাজন লাকি বেগম। সেই টাকা শোধ দিতে না পারায় ওই দম্পতির একদিনের নবজাতককে বিক্রি করে দেন লাকি। নবজাতক বিক্রির টাকা নেওয়ার পরেও বাকি টাকা দাবি করেন তিনি। ওই টাকা শোধ করা না হলে রানী বেগমকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় উপায়ান্তর না দেখে ফতুল্লা থানার দ্বারস্থ হন রানী। অপরদিকে, ভয়ে নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন হান্নান। 

সম্প্রতি ফতুল্লা থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই লাকি বেগম ও তার স্বামী হজরত আলী পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার কথা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেছিলেন, নবজাতক বিক্রির ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শিশুটিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে গত ৫ বছর ধরে এমন সুদি কারবার করে আসছে একটি পরিবার। এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী মো. আজাদ ও হজরত আলী। তাদের চক্রান্তে কলোনির নিম্ন আয়ের অনেকে এখন রানী-হান্নান দম্পতির মতো সর্বস্বান্ত।