আপনি পড়ছেন

শিবু লাল দাস পটুয়াখালী জেলা শহরের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ঠিকাদারী, ইজারাদার, আড়তদারিসহ নানা ব্যবসায় জড়িত তিনি। কোটি কোটি টাকার মালিক এই শিবু লাল দাসকে অপহরণ করে বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে চেয়েছিলেন ল্যাংড়া মামুন ও তার সহযোগীরা।

sibu lalহাত মুখ চোখ বাঁধা শিবু লাল দাস

মিরাজ মিয়া ছিলেন শিবু লালের পাজেরো জিপের ড্রাইভার। গত ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটার দিকে শিবু লাল দাস গলাচিপার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পাজেরো জিপে করে পটুয়াখালী শহরের বাসায় ফেরার পথে ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হন। দূরের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছাকাছি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাজেরো জিপটিকে উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিবু লালকে অপহরণের পরিকল্পনা হয় পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের গার্মেন্টস অফিসে। তাতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির ড্রাইভার জসিম।

পরে একাধিক দিন মিটিং ও অপারেশনাল পরিকল্পনা করা হয়। মিটিংয়ে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে যোগ দেয় জসিম উদ্দিন মৃধা এবং তার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা। ১০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয় ঢাকা থেকে। সেই গাড়ি যায় সুদূর পটুয়াখালী। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগসহ অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি ফোন।

বেশি দাম দিয়ে অন্যজনের নামে নিবন্ধনকৃত সিম কেনা হয় জেলা সদর থেকে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয় একটি খেলনা পিস্তল, দুটি সুইচ গিয়ার, তিনটি চাপাতি এবং গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি। পরে একাধিক দিন রেকি করে ফিল্মি স্টাইলে রোমহর্ষক অপারেশন চালানো হয় ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১১ এপ্রিল দুপুরবেলা পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হয় অপহরণকারীরা। কার কোথায় কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করে দেয় ল্যাংড়া মামুন এবং পিচ্চি রানা। শিবু লালের গতিবিধি জানার জন্য পিচ্চি রানা তার মোটরসাইকেলে ল্যাংড়া মামুনকে নিয়ে চলে যায় গলাচিপা ঘাটে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা হাইওয়ে রোডের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটা প্রাইভেট কার এবং একটা ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় ৫ জন। ল্যাংড়া মামুনের নির্দেশে পূর্বেই একটি ট্রাক্টর ভাড়া করে ড্রাইভার বিল্লাল।

ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারে ড্রাইভার আশিক মৃধা, পাভেল, হাবিব, সোহাগ- এই চারজন অবস্থান নেয়। ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে শিবু দাসের জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়।

পিছন থেকে অনুসরণ করতে থাকা ড্রাইভার আশিক তার প্রাইভেট গাড়িটি দিয়ে শিবুর গাড়ির পিছনে অবস্থান নিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। ট্রাক্টর এবং প্রাইভেটকার থেকে অপহরণকারীরা হুড়মুড় করে মুহূর্তেই উঠে যায় জীপে। আশিক প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু দাসের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল, পাভেল, সোহাগ, আশিক বেঁধে ফেলে শিবু ও তার ড্রাইভারকে।

গামছা, টিস্যু পেপার এবং স্কচ টেপ দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে চলতে থাকে চড়-থাপ্পড় কিল ঘুষি। সঙ্গে থাকা খেলনা পিস্তল ও ছোরা-চাকু দিয়ে ভয় দেখানো চলতে থাকে। বরগুনার আমতলী এলাকার গাজীপুরায় গিয়ে জিপ গাড়ি থেকে তাদেরকে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া গাড়িটিতে। সেখানে দুজনকে আরো ভালোভাবে বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়।

রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় গাড়ি বুঝে নেয়। গাড়ি চালাতে থাকে ল্যাংড়া মামুন নিজেই। ল্যাংড়া মামুন সোজা নিয়ে যায় তার এইচডি রোডের নিজস্ব মেশিনঘর কাম টর্চার সেলে। পরে নিয়ে যাওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্থায়ী সেলে। সেখানে রাতভর চলে নির্যাতন।

রাত ১টা ৪৫ মিনিটে রানার নির্দেশমতো শিবুর স্ত্রীকে ফোন করে পরদিন দুপুর ২টার মধ্যে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে বলে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেয় অপহরণকারীরা।

পরদিন ১২ এপ্রিল রাত ১১টায় ২৬ ঘণ্টা পরে হাত-পা এবং মুখ বাঁধা বস্তাবন্দি মুমূর্ষ অবস্থায় এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে শিবুকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

পটুয়াখালী জেলা পুলিশের রিকুইজিশনের প্রেক্ষিতে ওই জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার শিবু লাল দাসকে অপহরণ করার মূলহোতা ল্যাংড়া মামুনসহ ৪ জনকে গতকাল ১৯ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর, ভাটারা এবং গুলিস্তান এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি গুলশান বিভাগের একাধিক টিম।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুন, পিচ্চি রানা, বিআরটিসি জসীমউদ্দীন এবং আশিকুর রহমান। তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছা এবং ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুন পঙ্গু। ইতোপূর্বে অপরাধ করতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার ডান পা ঊরু পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। তার বাবা একজন মাওলানা হওয়ায় সেও হাফেজি এবং নূরানি লাইনে দীর্ঘ পড়াশোনা করে। পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতে।

আপন ভগ্নিপতির বিস্তর টাকা মেরে দিয়ে পটুয়াখালী জেলা শহরে মালিক হয়েছে একাধিক দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষদের টর্চার সেলে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো টাকা। মাওলানা হিসেবে তার বাবার সুখ্যাতি এবং পঙ্গু এই ক্যাডারের ভয়ে মুখ খোলে না অনেকেই। এবারও ভেবেছিল শিবু লালকে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে যে কোটি টাকা অর্জিত হবে তা দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টসের ব্যবসা শুরু করবে সে।

পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, অপর আসামি পিচ্চি রানা বিভিন্ন টোলপ্লাজায় টোল কালেকশনের কাজ করতো। কখনো কাজ করেছে ট্রাকের মিডিয়াম্যান হিসেবে। তৃণমূলের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সে ভেবেছিল, অপহরণ করে বড় অঙ্কের টাকা মারতে পারলে তা দিয়ে একাধিক ট্রাক কিনে ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে পরিবহনের ব্যবসা শুরু করবে।

ড্রাইভার জসিম উদ্দিন মৃধা ভেবেছিল অপরের গাড়ি না চালিয়ে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে নিজস্ব বাস কিনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে পটুয়াখালী রুটে চালাবে সে। আসামি আশিক দীর্ঘদিন ধরে রেন্ট-এ-কারের দালালি করে। সেও ভেবেছিল অপহরণ মুক্তিপণের টাকা দিয়ে একাধিক গাড়ি কিনে বড় পরিসরে রেন্ট-এ-কারের বিজনেস শুরু করবে।

আসামিদের বিরুদ্ধে মারামারি, মাদক এবং অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে। উদ্ধার করা মাদক মামলায় আসামিদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.