যে কারণে বাবার কোলে শিশুকে হত্যা করল তারা!

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩ বছরের শিশু তাসফিয়ার চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামী মো. রিমনসহ ৫ জনকে নোয়াখালীর চর ক্লার্ক (চর জব্বর) এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের হাতে আটক আসামিরা

আজ বুধবার নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ১৩ এপ্রিল বেগমগঞ্জ থানার দূর্গাপুর ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মো. আবু জাহেরের ৩ বছরের শিশুকন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়াকে ইট ছুড়ে আঘাত করা হয়।

পরবর্তীতে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাবা ও তার কোলে থাকা শিশু কন্যাকে গুলি করে মারাত্মকভাবে আহত করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নেওয়ার পথে শিশু তাসফিয়ার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ একটি অভিযান পরিচালনা করে নোয়াখালীর চর ক্লার্ক (চর জব্বর) এলাকায়। সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট সন্ত্রাসীদের সাথে র‌্যাবের গুলিবিনিময় হয়। এরপর তাসফিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. রিমনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অন্যরা হলেন- মো. সোহেল উদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন, মো. সুজন, মো. নাইমুল ইসলাম, মো. আকবর হোসেন। উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, বাদশা ও ফিরোজ নামের দুই প্রতিবেশীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি নিয়ে মাওলানা মো. আবু জাহের মধ্যস্থ করতে গেলে ক্ষিপ্ত হয় তারা।

এর প্রেক্ষিতে আসামিরা ফিরোজ ও মাওলানা আবু জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার ৪-৫ দিন পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত রিমন, মহিন, বাদশাসহ ৬-৭ জন হত্যার চুড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হত্যা সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে ২১ হাজার টাকায় একটি অস্ত্র কেনে রিমন।

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে র‍্যাব জানায়, ১৩ এপ্রিল বিকালে মাওলানা মো. আবু জাহের তার ৩ বছরের শিশুকন্যা তাসফিয়াকে চকলেট ও চিপস কিনে দেওয়ার জন্য বেগমগঞ্জ থানার হাজীপুর গ্রামের একটি দোকানে যায়। তখন রিমন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় এবং আবু জাহেরকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার দিকে ইট ছুড়ে মারলে সেটা গিয়ে লাগে কোলে থাকা শিশুকন্যা তাসফিয়ার মাথায়।

এখানেই শেষ নয়, সন্ত্রাসী রিমন তার কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাবা ও মেয়েকে গুলি করে। এতে দুজনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসার সময় পথেই মারা যায় শিশুকন্যা তাসফিয়া।

তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যায় আসামিরা। অতঃপর আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি থাকায় তারা নোয়াখালীর চরে এসে আত্মগোপন করে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা এলাকার একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র। রিমন এই দলের মূল হোতা। ২০১৬ সালে সে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। রিমনের নেতৃত্বে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কাজে লিপ্ত ছিল তারা। বেগমগঞ্জে ভুমি দখল, চাঁদাবাজি, মারামারি ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে থাকতো তাদের নাম।

গ্রেপ্তারকৃত মো. সোহেল উদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ভূমিকা পালন করে থাকে। মাওলানা জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা, অংশগ্রহণ ও অস্ত্র ক্রয়ের অর্থ যোগান দেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মারামারি ও হত্যার চেষ্টাসহ ৬টি মামলা রয়েছে।