জুয়াড়ি দেবরের কাছে ধারের টাকা চাওয়ায় লিমাকে খুন!

ঘটনাটি গত ১২ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১১টা ২০ মিনিটের। টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার বাংড়া পূর্ব পাড়ার সৌদি আরব প্রবাসী জাহিদ হোসেন ওরফে ময়নালের বসতঘরে তার স্ত্রী লিমা আক্তারকে (২৮) তার পরিবারের লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।

সিআইডির হাতে আটক ওয়াসিম

এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতের বেলায় নিজ গৃহে প্রবাসীর স্ত্রী খুনের ঘটনাটি দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার)-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে জড়িত মো. ওয়াসিমের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর এলআইসির বিশেষ টিম গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে আশুলিয়া থেকে ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করে।

সিআইডি সূত্র জানায়, ওয়াসিম পেশায় ট্রাক চালক। গাড়ি চালিয়ে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রায়ই তার সহকর্মীদের সাথে জুয়া খেলার কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। সেজন্য প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী জাহিদ হোসেনের স্ত্রী লিমা আক্তারের কাছ থেকে টাকা ধার করে সংসার চালাতেন। সেই টাকা পরিশোধ না করে উল্টো নিত্য নতুন ফন্দি এঁটে ধারের পরিমাণ বাড়াতে থাকে।

এদিকে, লিমা আক্তারের স্বামী জাহিদ হোসেনের সৌদি আরব থেকে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসে। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ে স্ত্রী লিমা আক্তারের। স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা থেকে কোনো সাক্ষী না রেখে প্রতিবেশী জুয়াড়ি দেবরকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার দেয়। টাকা না পেয়ে ওয়াসিমকে গালমন্দ করে লিমা। এছাড়া গ্রাম্য সালিশ বসানো ও আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা বলে। তাতে ক্ষিপ্ত হয় ওয়াসিম।

ধারের টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল এবং অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে ওয়াসিম। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১২ এপ্রিল রাতে লিমা আক্তারের ঘরের সামনে গিয়ে টাকা নিয়ে এসেছে বলে জানায়। লিমা আক্তার দরজা খুললে তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে ওয়াসিম। এরপর হাতে থাকা ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে লিমা আক্তারের মাথায়।

ঘরের মধ্যে থাকা লিমা আক্তারের ৪ বছর বয়সী শিশু সন্তান তাওহীদ চিৎকার করতে থাকলে ওয়াসিম দ্রুত পালিয়ে যায়। পাশের ঘরে থাকা লিমার শ্বশুড় জোয়াহের আলী ওয়াসিমকে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপর আশপাশের আত্মীয় স্বজন এগিয়ে এসে লিমা আক্তারকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

এই বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, লিমা আক্তার হত্যার ঘটনায় তার শ্বশুর মো. জোয়াহের আলী মিয়া টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।