আপনি পড়ছেন

ঘটনাটি আজ শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৬টার দিকের। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সাত মসজিদ রোডে চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে রিকশা আরোহী এক নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে রিকশা থেকে পড়ে যাননি তিনি। চিৎকার করলেন সজোরে।

snatched dhanmondiধাওয়া করে গাড়িটিকে আটক করেন তিন সাংবাদিক

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তিন সাংবাদিক। তারা তাকিয়ে দেখলেন ব্যাগটি সেই প্রাইভেটকারের জানালায় ঝুলে আছে। ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এরপর বাইক নিয়ে ওই গাড়িকে ধাওয়া করেন তিন সাংবাদিক।

ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের পাশে সাত মসজিদ রোডে দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টের সামনের আড্ডা দিচ্ছিলেন ওই তিন সাংবাদিক। র‌্যাবের সেহরি পার্টি শেষে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন তারা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু বলেন, হঠাৎ করেই এক মহিলার চিৎকার কানে ভেসে আসলো। রাস্তায় তখন রিকশা-গাড়ি চলতে শুরু করেছে। তাকিয়ে দেখি আমাদের থেকে দশ গজ দুরে সড়কে এক রিকশা আরোহী নারীর ব্যাগ ধরে টান দিয়ে নিয়ে গেল প্রাইভেটকারের ছিনতাইকারী। গাড়িটার নাম্বার দেখার চেষ্টা করলাম, ঝাপসা। দুর্ভাগ্যবশত আমার চশমা তখন মাথায় তোলা, দূরে কিছুটা কম দেখি। কিন্তু গাড়ির কালারটা মনে গেঁথে গেলো, ঘিয়া রঙের।

নুরুজ্জামান লাবু বলেন, আমার সাথে থাকা জনি আর ফয়সালকে বললাম পিছু নিতে। আমিও বাইক স্টার্ট করলাম। ফাঁকা রাস্তায় এক টানে জিগাতলার কাছাকাছি। জনি আর ফয়সাল জানালো, গাড়িটার পিছু তারা নিয়েছিল কিন্তু একটি বাসের আড়ালে হারিয়ে ফেলেছে। 

এর মধ্যেই জিগাতলার দিক থেকে একটি গাড়ি আসছিল সেইম কালারের। আমরা তিনজনই ধারণা করলাম এটাই সেই গাড়ি। কিন্তু গাড়িতে যাত্রী একজন মাত্র, চালক। তবু পিছু নিয়েছি। প্রাইভেটকার চালকের গতিবিধিও সন্দেহজনক। তিনি একবার ডানে টার্ন নিতে চায় তো, আবার সোজা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে সে ধানমন্ডি দুই নম্বরেরর মাঝ বরাবর বামে টার্ন নিল। আমরা তার পিছু নিয়ে তাকে আটকালাম।

ঘটনার বর্ননা দিয়ে লাবু আরও বলেন, গাড়িটা আটকালাম বলতে চালক অনেকটা নিজেই আত্মসমর্পণ করলো আমাদের কাছে। তার গাড়ির চাবিটা নিলাম আগে। সে প্রতিবাদ করলো না জোরালোভাবে। তাকে চার্জ করলাম ছিনতাইয়ের বিষয়ে। সে অস্বীকার করা শুরু করলো। এরইমধ্যে জনিকে দিয়ে ফোন করালাম ধানমন্ডি থানায়, টহল টিম পাঠাতে।

প্রাইভেটকার চালককে প্রশ্ন করলে তিনি কিছুটা এলোমেলো উত্তর দিচ্ছিলেন। একবার বললেন, মাত্রই হাজারীবাগের বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আসলেন। প্রশ্নের মুখে আরেকবার বললেন, সারারাত উবার চালিয়েছেন। আবার বললেন রাত তিনটার দিকে হাজারীবাগের এক হোটেলে সেহরি খেয়ে বাসায় ঘুমিয়েছেন। দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। তার বডিল্যাঙ্গুয়েজ পুরোটাই সন্দেহজনক।

এরইমধ্যে ধানমন্ডি থানার একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে টহল টিম এলো। এসআই গাড়ি থেকে নামছেন না। আমি, জনি, ফয়সাল এগিয়ে গেলাম তার কাছে। ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিলাম। তাকে মনে হচ্ছিল কিছুটা বিরক্ত। তিনি কিছুটা সময় গাড়িতে বসেই জানালা দিয়ে মুখ বের কথা বলছিলেন। বললেন, আমরা গাড়ির নম্বর দেখেছি কি-না? বললাম, গাড়ির নম্বর নিশ্চিত নই, তবে গাড়ির কালারের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। তিনি বললেন, নিশ্চিত না হয়ে তো কাউকে আমি থানায় নিতে পারি না। আমি বললাম, তার (গাড়িচালকের) ভাষ্যগুলো যাচাই করে দেখেন।

তিনি তাতে খুব একটা আগ্রহী না। তাকে একটু কড়াভাবেই বললাম, সাধারণ নাগরিক হিসেবে ছিনতাই প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে এসেছি, অনেকটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। আমরা তো দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে পারতাম। একটু শক্তভাবে কথা বলায় উনি এটা সেটা বোঝনাোর চেষ্টা করলেন। সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে মনে করিয়ে দিলে তিনি জানালেন, বেশিরভাগ ক্যামেরা নষ্ট। কিছু ক্যামেরার কন্ট্রোল করা হয় ডিএমপির কন্ট্রোলরুম থেকে। একথা-সেকথা বলছিলেন।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন সেই প্রাইভেটকার চালক। তিনি বুঝতে পারছিলেন যেহেতু হাতেনাতে ধরতে পারেনি, সো প্রমাণ করা অসম্ভব। তিনিও পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তার উবারে গাড়ি চালানোর জন্য সকালেই বেরিয়েছেন বলে আগের সেই যুক্তি দেখালেন। এভাবে কিছু সময় গেল। আমি নিজেই প্রাইভেটকার চালকের মোবাইল ফোন ঘেঁটে সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। এরমধ্যে টহল টিমের পুলিশ সদস্যরা গাড়িটা তল্লাশী করলো, কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিতে হলো।

সিনিয়র সাংবাদিক লাবু বলেন, অথচ হওয়ার কথা ছিল অন্যরকম। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সেই চালককে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামের চেক করতে পারতেন। যদি এই গাড়িটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত নাও থাকে তবু টাইম অনুযায়ী এবং আমাদের তিন জন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী ছিনতাইকারীদের গাড়িটা চিহ্নিত করার সম্ভাবনা ছিল। তেমন কোনও আগ্রহ দেখা গেল না।

ভোরের ঢাকা যে অরক্ষিত বা ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েছে তা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সড়কে চেকপোস্ট বা টহল আগের চাইতে বাড়ানো হয়েছে। কিন্ত ছিনতাই কমছে না। টহল-চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ঘটনা ধরে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।

বাংলাদেশে নানা ধরণের অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগের কৌশলগুলো এখনও কিছুটা প্রথাগত। আধুনিক এবং আরো বেশি কৌশলী হতে না পারলে অপরাধ দমন একেবারেই সম্ভব না।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.