সুযোগ বুঝে মস্কো থেকে ‘পানির দরে’ তেল চাচ্ছে নয়াদিল্লি

ইউক্রেনে হামলার জের ধরে রাশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশ ও সংস্থাগুলো। তাদের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। এতদিন এর কারণ হিসেবে বন্ধুত্বের কথা শোনা গেলেও এখন জানা গেছে, ভারত এই সুযোগে বড় ধরনের ছাড় চাইছে রাশিয়ার কাছ থেকে।

অপরিশোধিত তেল

আগেই জানা গিয়েছিল, অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত। এখন জানা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে, ভারতীয় গণমাধ্যমের বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় ‘পানির দরে’ তেল কেনার প্রস্তাব করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন যেখানে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০৫ ডলার, সেখানে ভারত রাশিয়াকে ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারেরও কম দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

এর জন্য তারা যুক্তিও দিয়েছে অভিনব। তারা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে আন্তর্জাতিক তেল রপ্তানি সংস্থা ওপেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে যেমন সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকছে, তেমনি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথেও সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। এতকিছু মাথায় রেখেই ‘বন্ধু’ রাশিয়ার থেকে তেল কেনার ঝুঁকি নিচ্ছে ভারত। আর তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই রাশিয়ার কাছ থেকে ওই ছাড় চাইছে ভারত।

রাশিয়ার তেলবাহী ট্যাঙ্কার

জানা গেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে পুরোপুরি সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে ভারত। রাশিয়ার তেল-গ্যাস ও অন্যান্য ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে বিশ্বজুড়ে যেখানে হাহাকার শুরু হয়েছে, সেখানে কম দামে তেল কিনে গুদাম ভরছে ভারত।

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, যুদ্ধ চলা গত ৭০ দিনের মধ্যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে চার কোটি ব্যারেল। ২০২১ সালের পুরোটাজুড়ে ভারত রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল কিনেছিল, এ বছরের প্রথম চার মাসেই তার তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি তেল কিনেছে।

মধ্যপ্রাচ্য তেলের অন্যতম সেরা রপ্তানি মার্কেট হলেও ভারতের ব্যবসায়ী মহলের মতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কেনাটা তুলনামূলক কম লাভজনক। কারণ সেখানকার তেল রপ্তানি করা হয় ছোট ছোট জাহাজে, সময়ও অনেক বেশি লাগে। সে তুলনায় রাশিয়ার তেল তুলনামূলক সস্তা এবং বড় জাহাজে করে রপ্তানি হওয়ায় সব দিক দিয়েই সুবিধাজনক।

সম্প্রতি ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখতে যে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করবে ভারত। অর্থাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি যেমনই থাকুক না কেন, চলমান পরিস্থিতিতে সস্তায় তেল কিনে রাখতে অন্য কোনো বিবেচনায় মাথায় নেবে না ভারত।