পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ- ইংল্যান্ড সিরিজ

দেশের মাটিতে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের আশা নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেললো বাংলাদেশ। কিন্তু জেতা হয়নি। মাশরাফির দৃষ্টিতে যা, প্রথম ম্যাচের ভুল টানতে গিয়ে খুয়াতে হয়েছে সিরিজ। একবার পিছনে ফেরা যাক। দেখা যাক সদ্য সমাপ্ত সিরিজের নানা গল্প ও পরিসংখ্যান।

এই সিরিজে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান (১৬৯) করেছেন ইমরুল কায়েস। এক সিরিজ আগেও ওয়ানডে দলে তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। টেস্টে তামিমের পর ইমরুলই বাংলাদেশের এক নম্বর ওপেনার। কিন্তু ওয়ানডেতে তার ভরসা করতে পারছিলো না টিম ম্যানেজমেন্ট। এবার সুযোগ পেয়েই জায়গাটা নিজের করে নিলেন তিনি। বল হাতে এক নম্বর আদিল রশিদ। এই লেগ স্পিনার তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন। দুটো কম নিয়ে তার পরই আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এই সিরিজে বোলার মাশরাফি ছিলেন চোখ ধাঁধানো। এই সিরিজে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য সাব্বির রহমানকে পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে ৭০ রান করলেও হতাশ করেননি তিনি।

প্রথম ম্যাচ, মিরপুর, শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম
ইংল্যান্ড ৩০৮/৯, ওভার ৫০; বাংলাদেশ ২৮৮/১০, ওভার ৪৬.১। ইংল্যান্ড ২১ রানে জয়ী।

বেন স্টোকস, বেন ডাকেট ও জস বাটলারের ব্যাট এক সঙ্গে হেসে উঠেছিলো প্রথম ম্যাচে। তাতেই ইংল্যান্ড তুললো ৩০৯ রান। এই রানও টপকেই যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে ওপেনিংয়ে ফিরেই ইমরুল খেলেন ১১২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ৫৫ বলে ৭৯ করে সাকিবও কাঁপিয়ে দেন মিরপুর। কিন্তু ৪০ ওভারের পরে গিয়ে হঠাৎ করেই খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। চরম অনীহার পরও হজম করতে হয় ২১ রানের হার।

দ্বিতীয় ম্যাচ, মিরপুর, শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম
বাংলাদেশ ২৩৮/৮, ওভার ৫০; ইংল্যান্ড ২০৪/১০, ওভার ৪৪.৪। বাংলাদেশ ৩৪ রানে জয়ী।

একই ভেন্যু। একই উত্তেজনা। যে উত্তেজনার শেষ হয় ৩৪ রানের জয়ে। অবশ্য সিরিজ শেষ জয়ের চেয়েও বেশি মনে পড়েছে ‘অলরাউন্ডার’ মাশরাফির ব্যাট চালানো আর বল হাতে তার জাদুর কথা। ব্যাটসম্যান মাশরাফিকে বাংলাদেশি ভক্তদের অচেনা নয়। এই বয়সে ওই ম্যাচে মাশরাফি বোলিংটা করলেন তা ছিলো এক কথায় অনবদ্য। ২০০ হবে কিনা, এ শঙ্কায় যখন বাংলাদেশ কাঁপছে মাশরাফি তখন খেললেন ২৯ বলে ৪৪ রানের দারুণ ইনিংস। তার আগে ৭৫ রান করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই দুজনের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৮; তেমন বড় নয়। তারপরও ইংলিশদের টপ অর্ডার ছেঁটে ফেলে বাংলাদেশকে জয়ের পথ ধরিয়ে দেন মাশরাফি। পরে তাসকিনের তিন উইকেট বাংলাদেশকে পৌঁছে জয়ের বন্দরে। এই ম্যাচের গল্পে জস বাটলারের আউটের পর বাংলাদেশের প্রচণ্ড উল্লাস এবং তারপর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক মাশরাফি- সাব্বিরের জরিমানা এবং তার আগে হ্যান্ডশ্যাকের সময় তামিম- স্টোকসের বিষয়টিও থাকুক।

তৃতীয় ম্যাচ, চট্টগ্রাম, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম
বাংলাদেশ ২৭৭/৬, ওভার ৫০; ইংল্যান্ড ২৭৮/৬, ওভার ৪৭.৫। ইংল্যান্ড চার উইকেটে জয়ী। 

টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টি। ম্যাচ হবে, ম্যাচ হবে না; এই রকম দোলাচল চললো ম্যাচের ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বৃষ্টির বাধা ছাড়াই ম্যাচ শেষ হলো। তবে বাংলাদেশের বাধা হয়ে দাঁড়ালো শিশির। স্পিনাররা বল গ্রিপ করতে পারলেন না। ২৭৮ রানের লক্ষ্যটাও ইংলিশদের কাছে হাতছোঁয়া দূরত্বের হয়ে থাকলো। টস না জিততে না পারা এবং শিশির; এই আফসোসে শেষ হলো সিরিজ। শেষ হলো দেশের মাটিতে টানা সিরিজ জেতার দৌড়ও। তামিম, ইমরুল ও সাব্বিরের সেট হয়ে আউট হওয়া এবং মুশফিকের দারুণ ইনিংসের মাধ্যমে রানে ফেরা; শেষ ম্যাচের পরিসংখ্যান থেকে মন থাকবে এই দুটো ব্যাপার। এ ছাড়া মনে থাকবে এই ম্যাচের মাধ্যমেই তামিমের পাঁচ হাজার ওয়ানডে রান পাওয়ার স্মৃতিও।

আপনি আরো পড়তে পারেন

মাশরাফি: শিশির না পড়লে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতো

উৎসব নয়, চট্টগ্রামে নামলো বিষাদের রাত

এতো রান চেজ করে চট্টগ্রামে কেউ জিতেনি

ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশের ২৭৮ রানের চ্যালেঞ্জ

সবার আগে ৫ হাজার তামিমের