এখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে আমিরের পরিবার

২০১০ সালের আগস্টের শেষ দিনগুলো কি জীবনের কোন মুহূর্তে ভুলতে পারবেন মোহাম্মদ আমির? শুধু আমির কেন, পাকিস্তান ক্রিকেটেরই ভোলার কথা নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট চলার সময় স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন আমিরসহ তিনজন। যে পাপের ঘানি টানতে হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। শুধু আমির নয়, তার পাপের ঘানি টানতে হয়েছে পরিবারকেও।

কম বয়সী আমির যখন স্পস্ট ফিক্সিংয়ের কলঙ্কে জড়িয়ে পড়েন। ইচ্ছাকৃত নো বল করে নিষিদ্ধ হন, তার পরিবারের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। পাড়া-প্রতিবেশি, এলাকাবাসী যারাই সামনে পেতেন রীতিমতো ছিড়ে খেতে চাইতেন। ছয় ভাই-বোনের পরিবার আমিরদের। ভাই-বোনসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে আমিরের পাপের শাক্তি ভোগ করতে হয়েছে বিভিন্নভাবে।

নিয়মিত বিভিন্ন কটু কথা তো শুনতে হতোই, লাঞ্ছনার শিকারও হতে হতো। উপায়ন্তর না দেখে বসতবাড়িই ছাড়তে হয়েছে আমিরের পরিবারকে। রাওয়ালপিন্ডি ছেড়ে তখন লাহোরে চলে যায় আমিরের পরিবার। অন্যদিকে আমিরের ক্যারিয়ারই ধ্বংস প্রায় তখন। পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। জেলেও যেতে হয়েছিল।

তবে ওই সকল দুঃখ-কষ্টের স্মৃতি এখন অতীত। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও জাতীয় দলে ফিরেছেন আমির। বল হাতে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ভরসা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতীয়দের রীতিমতো মাটিয়ে নামিয়ে আনার বড় কৃতিত্ব তো আমিরেরই। ৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামলে মাত্র ৩৩ রানের মধ্যে ভারতের প্রথম তিন উইকেট তুলে নেন আমির।

শুরুতে আমিরের এমন ধাক্কার পর আধিপত্য ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। ফাইনালে এমন পারফরম্যান্সে আমিরের প্রশংসায় পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। তবে এই প্রশংসা গর্বিত হওয়া নয়, আমিরের পরিবার আনন্দিত এখন ভালোভাবে বাঁচতে পারার স্বস্তিতে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারার স্বস্তিতে।

শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে অমন বোলিং করে পাপ মোচন যে অনেকটাই করে ফেললেন আমির। আর হয়তো কটুকথা শুনতে হবে না। হয়তো পরিবারের কোন সদস্যদের লাঞ্ছিতও হতে হবে না!

আমিরের দুই ভাই নাভিদ ও ইজাজের কথাতেও ফুটে উঠল বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারার স্বস্তি। গণমাধ্যমকে আমিরের ভাই বলেছেন, ‘রোববার (ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে) নতুন বলে আমিরের ওই স্পেলটা সমস্ত লজ্জা ধুয়ে পরিবারকে সম্ভ্রমের জায়গায় দাঁড় করিয়েছে।’

একটু চোখ বন্ধ করতেই স্মৃতির দুয়ার খুলে গেলো আমিরের ভাই নাভিদের। বললেন, ‘রাওয়ালপিন্ডিতে চাঙ্গা বুঙ্গিয়াল গ্রামে তখন থাকতাম আমরা। যখন আমির স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে দোষী সাব্যস্ত হলো, তখন গ্রামের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলতে বা মিশতে লজ্জা লাগত। তারপর লাহোরে চলে আসি আমরা। কিন্তু আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজনরা রয়ে গিয়েছিল রাওয়ালপিন্ডিতেই।’

নাভিদ যোগ করেছেন, ‘এখন গ্রামে গেলে ভাইয়ের জন্যই চোখ তুলে কথা বলতে পারব সকলের সাথে। পাঁচ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর আমির চেয়েছিল এমন কিছু একটা করতে যাতে ওকে আলাদা ভাবে চিনিয়ে দিবে। ভারতের বিপক্ষে ও সেটা করে দেখিয়েছে।’