গেইলের ঝড়ো তাণ্ডবলীলা, খুলনা টাইটান্সের বিদায়

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) লিগ পর্বে মিরপুরের উইকেটকে মনে হচ্ছিলো ব্যাটসম্যানদের মৃত্যুকূপ। বহু চেষ্টায়ও এখানে নিয়মিত রান পাচ্ছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। ফলে প্লে-অফে ব্যাটসম্যানরা কতোটা কী করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিলোই। সেই সংশয়ের মধ্যেই এলিমিনেটর ম্যাচের প্রথম ইনিংসে খুলনা তুলে ফেলে ১৬৭ রান। জয়ের জন্য যে রানকে যথেষ্টই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ক্রিস গেইলের সময়োচিত এক ঝড়ে উড়ে গেছে তারা। এলিমিনেটরে খুলনাকে উড়িয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে উঠে গেছে রংপুর রাইডার্স।

১৬৮ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ঝড়ো ব্যাটিং করেন গেইল। নিজের খেলা তৃতীয় বলেই ছয় মেরে দেন তিনি। প্রথম ওভারে এক ছয় মেরে খুশি থাকলেও, পরের ওভারে মাহমুদুল্লাহকে এক ছয়ের পাশাপাশি দুটি চারও মারেন গেইল। ম্যাচ থেকে এবং বিপিএল থেকে খুলনার ছিটকে যাওয়ার শুরুটা হয়ে যায় তখনই।

খুলনাকে ফাইনালের পথ থেকে ছিটকে দেয়ার ম্যাচে ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা বিপিএলে গেইলের চতুর্থ সেঞ্চুরি। বিপিএলে এতো সেঞ্চুরি নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের। বিপিএলে আসলে গেইল ছাড়া একাধিক সেঞ্চুরিই নেই আর কারো।

আজকের সেঞ্চুরিটির মাধ্যমেই বিপিএলের পঞ্চম আসর পেয়ে যায় প্রথম সেঞ্চুরিয়ান এবং আসরের এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দুই নম্বরে চলে যান সিকান্দার রাজা। তিনি ৯৫ রান করেছিলেন। সেঞ্চুরিটি করতে গেইল ১২টি ছয় ও ছয়টি চার মারেন। সেঞ্চুরি করার পর খেলা তিন বলে আরো দুটি ছয় মারেন তিনি!

গেইলের এমন ঝড়ো তাণ্ডবলীলার পর আসলে ম্যাচে খুলনার অস্তিত্ব হয়ে পড়েছিলো প্রায় অদৃশ্য। মিরপুর স্টেডিয়ামের দর্শকে ঠাসা গ্যালারি দেখছিলো কেবল ‘সিক্স-মেশিন’ গেইলের তাণ্ডব। তার ব্যাটের প্রতি বাউন্ডারি দর্শকদের কাছে হয়ে আসছিলো গগণবিদারী উল্লাসধ্বনির উপলক্ষ।

গেইল শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ১২৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। বিপিএলের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের নতুন রেকর্ড। এর আগে এই রেকর্ড ছিলো সাব্বির রহমানের। তিনি ১২২ রান করেছিলেন।

গেইলের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৮ বল বাকি থাকতেই ১৬৮ রানের লক্ষ্যটা ছুঁয়ে ফেলে রংপুর রাইডার্স। যা তাদের নিয়ে যায় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে আজকের দ্বিতীয় ম্যাচের (ঢাকা ডায়ানামাইটস বনাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) হারা দল।

এর আগে খুলনার ১৬৭ রান আসে তাদের দলীয় প্রচেষ্টার দারুণ ফল হয়ে। খুলনার ইনিংসে কেউই ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি। তারপরও তাদের ১৬৭ রানের লড়াকু পুঁজি পাওয়াটা বিস্ময়করই ছিলো। বিস্ময়কর ছিলো, তাদের পাঁচজন ব্যাটসম্যানের ২০-এর ঘরে ঢুকার পরও ৩০ ছুঁতে না পারাটাও!

সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে আরিফুল হকের ব্যাট থেকে। ২৮ রান করেন নিকোলাস পুরান। এ ছাড়া ছয় বলে ২০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৯ বলে ২৫ করেন কার্লোস ব্রাফেট। ২০-এর ঘরে ঢোকা অন্য ব্যাটসম্যান হলেন মাইকেল ক্লিঞ্জার। তিনি করেন ২১ রান। খুলনার এই দলীয় প্রচেষ্টার কথা অবশ্য মনে থাকার কথা নয় কারো! গেইল যে দিন জ্বলে ওঠেন, সেদিন আসলে কিছুই মনে থাকে না কারো; গেইল ছাড়া!