গতি ফিরছে মোস্তাফিজের, ফিরছে কাটারের ভেলকিও

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে কাটারের দারুণ ভেলকি দেখিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে ছিলো দারুণ গতিও। মোস্তাফিজ তার ক্যারিয়ার শুরুই করেছিলেন কাটার ও গতির সমন্বয়ে ব্যাটসম্যানদের পিলে চমকে দিয়ে। কিন্তু একের পর এক ইনজুরি, কাঁধের অস্ত্রোপচার এবং দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কারণে মোস্তাফিজের এ সব বৈশিষ্ট দেখা যাচ্ছিলো না অনেক দিন ধরে। ফলে তাকে নিয়ে বাড়ছিলো দুশ্চিন্তা। সেই দুশ্চিন্তা কেটে যাওয়ার আভাস মিললো ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে।

বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসেল মঙ্গলবার মুখোমুখি হয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমের। এ সময় তিনি মোস্তাফিজের বিষয়ে বলেন, ‘সে আগের মতো গতি ফিরে পাচ্ছে। এ ছাড়া তার ফিটনেসও এখন আগের তুলনায় বেশ ভালো। আশা করছি সামনে সে তার শুরুর সময়ের মতো ফর্মও ফিরে যাবে।’

ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতে খুব বেশি উইকেট অবশ্য পাননি মোস্তাফিজ। তিনি ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নিয়েছেন কেবল দুটি উইকেট। এই বোলিংয়েই মোস্তাফিজ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নিজেকে ফিরে পাওয়ার পথে তিনি এগিয়ে গেছেন অনেকটা পথ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে কাটার ব্যবহার করে চমকে দিয়েছেন মোস্তাফিজ। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে এই কথা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো যে, মোস্তাফিজ তার কাটার হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আসলে যা তা নয়, সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। এ ছাড়া হঠাৎ হঠাৎ ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে স্লোয়ারও ছেড়েছেন মোস্তাফিজ। যা সামাল দিতে বেগ পেতে হয়েছে জিম্বাবুয়ান ব্যাটসম্যানদের।

২০১৬ সালে কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর থেকেই মূলত ম্লান হয়ে যাচ্ছিলেন মোস্তাফিজ। এরপর দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ সিরিজে একটু আধটু ভালো বোলিং তিনি করেছেন বটে, কিন্তু তাতে পুরোনো মোস্তাফিজকে পাওয়া যাচ্ছিলো না মোটেই। এর মধ্যেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পায়ের গোড়ালিতে চোট পান তিনি। সব মিলিয়ে অত্যন্ত বাজে সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলেন এই পেসার।

তার বিষয়ে বুধবার মিরপুরে রিচার্ড হ্যালসেল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বেসবল খেলায়ও এমন (কাঁধে অস্ত্রোপচার করার মতো) ইনজুরি হয়। এ ধরনের ইনজুরি থেকে পুরোপুরি পুরনো রূপে ফিরে আসতে একজন খেলোয়াড়ের অন্তত দুই বছর সময় লাগে। মোস্তাফিজ এর মধ্যেই ৮৫ কিলোমিটার গতিতে বল করছে। প্রতি সপ্তাহেই তার গতি একটু একটু বাড়ছে। এতে তার কাটার আরো কার্যকর হয়ে উঠছে এবং সে আত্মবিশ্বাসও ফিরে পাচ্ছে।’

হ্যালসেল আরো বলেন, ‘আমার কাছে মোস্তাফিজের বিষয়ে সবচেয়ে ভালো লাগে তার কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা। আসলে যে তার কাজের বিষয়ে প্রচণ্ড ভালোবাসা লালন করে, তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা সবার জন্যই আনন্দের ব্যাপার।’

মোস্তাফিজের কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে মুশফিক ও তামিমের পরিশ্রম করার উদাহরণ টেনে হ্যালসেল বলেন, ‘আমরা মুশফিক ও তামিমকে নেটে প্রচুর অনুশীলন করতে দেখি। একই ভাবে মোস্তাফিজের মতো একজন বোলারকে অনুশীলন করতে দেখাটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যাপার।’

মোস্তাফিজের বিষয়ে এ রকম অকপট প্রশংসা ঝড়েছে সাকিব আল হাসানের কণ্ঠেও। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর তিনি মোস্তাফিজের বিষয়ে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না মোস্তাফিজ কখনো খারাপ বোলিং করেছে। একটা মানুষের পক্ষে প্রতিদিন ভালো কিছু করা সম্ভব না।’

মোস্তাফিজকে সমীহ দেখিয়েছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারও। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে বড় ব্যবধানে হারের পর ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজ বিশ্বমানের বোলার। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর তার বোলিং আবার আগের মতো হচ্ছে। তার কাটার খেলা কঠিন। এ ছাড়া তার স্লোয়ারও অন্য রকম।’

ত্রিদেশীয় সিরিজে মোস্তাফিজ যদি তার এই ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত স্বস্তির ব্যাপার হবে। বিশ্বকাপের এক বছরে আগে মোস্তাফিজের সেরা ফর্মে থাকাটা নিশ্চিতভাবে বড় স্বপ্নও দেখাবে বাংলাদেশকে।