বাংলাদেশ দল যেনো এখন সুখী পরিবার

টানা দুই জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ দলকে যদি এখন একটি সুখী পরিবারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, মনে হয় না অতিশয়োক্তি হয়ে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বিষাদের অতল গহ্বরে ডুবে যাওয়া দলটিতে এমন সুখের আনাগোনা অবশ্য শুধু মাত্র দুইটা জয়ের জন্যই নয়, বরং টিম ম্যানেজমেন্টের পরিবর্তনও মাশরাফি-তামিমদের ড্রেসিংরুমে বইয়ে দিয়েছে স্বস্তির সুবাতাস।

ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর সাকিব আল হাসান সংবাদ মাধ্যমে এসে বলে যান যে, তারা আগের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা পাচ্ছেন এখন। নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজের নিতে পারছেন বলে সবার মধ্যে আরো ভালো খেলার তাড়না বিরাজ করলে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কিন্তু পুরো ব্যাপারটা আসলে কী— তা সবিস্তারে বলার সুযোগ ছিলো না সাকিবের। এক দিন পর টেকিনিক্যাল ডিরেক্টরের পদ নিয়ে জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করা খালেদ মাহমুদ সুজন এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলকে ঠিক কেমন স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে, এ বিষয়ে মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি, যাতে খেলোয়াড়রা তাদের সিদ্ধান্ত তারাই নিতে পারে।’

মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদুল্লাহর অভিজ্ঞতা এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বাংলাদেশ দলে প্রায় ৬০ বছরের অভিজ্ঞতা জমে গেছে। দলের সবাই অভিজ্ঞ এবং আমরা মনে করি, তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই এখন নিতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার ঘরোয়া পর্যায়ে অধিনায়কত্ব করেছে।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা মুশফিকুর রহিম সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেছিলেন যে, তার ফিল্ডিং পজিশনও কোচরা ঠিক করে দেন। এ নিয়ে সে সময় দারুণ বিতর্ক হয়েছিলো। সংবাদ মাধ্যমে মুশফিকের ওই রকম বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকেও প্রকাশ করা হয়েছিলো অসন্তোষ। ধারণা করা হয়, ওই ঘটনার জের ধরে টেস্ট অধিনায়কত্বই হারান মুশফিক। মাহমুদের কথায় এমন ইঙ্গিত ছিলো যে, খেলার সময় ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে কোনো নির্দেশনা দেয়ার পক্ষে নন তিনি। যা চান্দিকা হাথুরুসিংহের সময় ঘটতো বলে অভিযোগ আছে।

মাহমুদ বলেন, ‘খেলার সময় ড্রেসিংরুম থেকে প্রয়োজন হলে আমরা নির্দেশনা পাঠাই। কিন্তু সেটা শোনা বা না শোনা খেলোয়াড়দের ব্যাপার। আমি মনে করি, এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে খেলোয়াড়দের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। আমরা এই চাপটা সৃষ্টি করতে চাই না।’

বিষয়টি আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে মাহমুদ বলেন, ‘মাঠের বাইরে থেকে সব সময় উইকেট বোঝা যায় না। যারা মাঠে খেলে, উইকেটটা বেশি বোঝে তারাই। হয়তো মাঠের বাইরে থেকে আমি একজন বোলারকে বোলিংয়ে আনতে চাইলাম, কিন্তু অধিনায়ক হয়তো তার উপর নয়, বরং ভরসা করছে অন্য কারো উপর। এ ধরনের ব্যাপার চাপ সৃষ্টি করে। তবে মাঠের বাইরে কেউ কোনো পরামর্শ চাইলে আমরা তা দেই। আবার অনেক সময় কোনো খেলোয়াড় তার করণীয় ভুলে গেলে আমরা তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে একের পর এক হারের আঘাতে মাশরাফিদের মনে যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিলো, ত্রিদেশীয় সিরিজে নতুন ম্যানেজমেন্টের অধীনে পাওয়া স্বাধীনতা হয়তো সেই ক্ষতে দিয়ে দিচ্ছে আরাম-প্রলেপ। যে প্রলেপ পেয়ে সত্যি সত্যি সুখী পরিবার হয়ে উঠছেন মাশরাফিরা। সুখী পরিবার হয়ে উঠার এই প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ পূর্ণ হতে পারে ত্রিদেশীয় সিরিজটি জিতে গেলে। সেটা হয়তো স্বাধীনতা পাওয়ার সুফল হিসেবেও প্রামাণ্য দলিল হয়ে উঠতে পারে!