অবিশ্বাস্য মাহমুদুল্লাহ, অবিস্মরণীয় জয় বাংলাদেশের

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে যেতে শেষ ওভারে বাংলাদেশে দরকার ছিলো ১২ রান। অবিশ্বাস্য বীরত্বে সেই রান করে বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

অথচ শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে কোনো রান তো নিতে পারেই নি বাংলাদেশ, উল্টো রান আউট হয়ে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরের দুই বলে ছয় রান নেন মাহমুদুল্লাহ এবং পঞ্চম বলে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে মেরে দেন অবিশ্বাস্য ছয়। এক বল বাকি থাকতেই প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা নামিয়ে ফাইনালে উঠে যায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ১৮ বলে ৪৩ রান করে থাকেন অপরাজিত।

১৬০ রানের লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে ১১ রানে লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে ১৯ বলে ৪৩ রান করে চমক দেখানো লিটন এদিন ওয়াইড বল কাভারের দিকে ঠেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন।

লিটনের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে ২২ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান। আরো এবার সাব্বির প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হন। তিন চারে আট বলে ১৩ রান করে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশ পড়ে যায় বিপদে।

বিপদ সামাল দেন তামিম ও মুশফিকুর রহিম। ৬৪ রান যোগ করেন তারা। ১৩তম ওভারে ২৮ রান করে ফেরেন মুশফিক এবং পরের দুই ওভারে বিদায় নেন তামিম ও সৌম্য সরকার। আউট হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন তামিম। কিন্তু দলকে জিতিয়ে আনতে না পারার কারণে তামিমকে নিয়ে যে আক্ষেপ, তা দূর করতে আরো একবার ব্যর্থ হন বাংলাদেশের এক নম্বর ওপেনার।

সংশয়পূর্ণ ফিটনেস নিয় এই ম্যাচ খেলতে নামা সাকিব কিছু করতে পারেননি ব্যাট হাতে। নয় বল খেলে সাত করেন ফেরেন তিনি। সাকিব যখন আউট হন জেতার জন্য তখনও দরকার ২৩ রান। বল বাকি ছিলো ১২টি।

১৯তম ওভারে প্রথম পাঁচ ১১ রান নেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ সাত বলে প্রয়োজন দাঁড়ায় ১২ রান। কিন্তু ১৯তম ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের চাপ বেড়ে যায় আরো এবং শেষ ওভারে তখন দরকার ১২ রান।

শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে কোনো রান তো নিতে পারেই নি বাংলাদেশ, উল্টো রান আউট হয়ে ফেরেন মোস্তাফিজ। এরপরই অবিশ্বাস্য রূপ নিয়ে হাজির হন মাহমুদুল্লাহ এবং বাংলাদেশকে এনে দেন অবিস্মরণীয় জয়। যে জয়ে বাংলাদেশ উঠে যায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে। রোববারের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।

এর আগে ৫০ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেললেও কুসাল পেরেরা এবং থিসারা পেরেরার ৯৭ রানের জুটিতে ভর করে ১৫৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। সর্বোচ্চ ৬১ রান করে কুসাল। আর থিসারার ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান।

এই ম্যাচ দিয়ে প্রায় দুই মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়ক হয়ে ফেরার দিনে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রো এনে দেন তিনিই। তার বলে ক্যাচ তুলে দেন লঙ্কান ওপেনার দানুসকা গুনাথিলাকা। পরে মোস্তাফিজ নেন দুই উইকেট এবং এক উইকেট পড়ে রান আউটের ফাঁদে। সব মিলিয়ে ৪১ রানে পাঁচ ইউকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

তখন মনে হয়েছিলো সহজেই লঙ্কা-বধ করে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠে যাবে বংলাদেশ। কিন্তু বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান দুই পেরেরা। বাংলাদেশি বোলারদের বেকায়দায় ফেলে ষষ্ট উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন তারা।

কিন্তু ম্যাচ শেষে আর তাদের জুটি মনে থাকার কথা নয় বাংলাদেশের। কারণ শেষ ওভারের অবিশ্বাস্য নাটকে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ এবং মনে যে এখন কেবলই তিনি!