সিরিজ বাঁচাতে বাংলাদেশের আশা কোথায়?

একটা মাত্র হার। তাও ক্রিকেটের এমন এক ফরম্যাটে, সত্যিকারের ক্রিকেটবোদ্ধারা যে ফরম্যাটকে কেবলই ছেলেখেলা মনে করেন। মনে করেন সময় কাটানোর অনুসঙ্গ। তারপরও, এই ফরম্যাটের এক হারই বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে হেনেছে বল্লমের আঘাত। যে আঘাতে সমর্থকদের হৃদয়ে চলছে বিরামহীন রক্তক্ষরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ পাতলেই দেখা যাচ্ছে হাহাকার আর হাহাকার। যেনো সব শেষ হয়ে গেছে!

এই পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার মাঠে নামছেন সাকিব আল হাসানরা। এ দিন রাত সাড়ে আটটায় মাঠে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। আপাত দৃষ্টিতে এটিও শুধু মাত্র একটি ম্যাচই। কিন্তু এই ম্যাচটা হারলেই প্রথমবার আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারের কষ্টে ভুগতে হবে বাংলাদেশকে। এমন সময়ে সাকি আল হাসানরা আশা দেখছেন কোথায়?

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। ম্যাচ শেষে এই সত্যটা স্বীকার করা ছাড়া কোনো উপায়ই ছিলো না সাকিবের সামনে। বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেন, ‘সব বিভাগেই আফগানিস্তান আমাদের উড়িয়ে দিয়েছে। বলতেই হবে ওরা ভালো দল। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নানা দিকে নজর দিতে হবে। অনেক উন্নতি করতে হবে।’

বাংলাদেশের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উন্নতি দরকার পেস বোলিংয়ে। টি-টোয়েন্টির পেস আক্রমণে মাশরাফি বিন মর্তুজা নেই। প্রধান ভরসা হয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সিরিজ শুরুর আগে তাকে কেড়ে নিয়েছে ইনজুরি। এ দুজনকে ছাড়া যে পেস আক্রমণ নিয়ে আফগানিস্তানের সাথে খেলতে গেছে বাংলাদেশ, সেই আক্রমণের না আছে বিষদাঁত, না পেসারদের দুর্ধর্ষ রূপ; এক রুবেল হোসেন ছাড়া। কিন্তু রুবেল একা কতোটা কী করতে পারেন, তার একটা প্রামাণ্যচিত্র তো প্রথম ম্যাচই।

প্রথম ম্যাচে রুবেলের সঙ্গী ছিলেন আবুল হাসান রাজু ও আবু জায়েদ রাহী। আবুল হাসান এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত কিনা, তা নিয়ে আছে জোরালো প্রশ্ন। আর আবু জায়েদ রাহীর এখনো প্রমাণের আছে অনেক কিছু। তিন পেসার মিলে প্রথম ম্যাচের শেষ তিন ওভারে দিয়েছেন ৫২ রান! এর মধ্যে নিজেদের একটি করে ওভারে ২০ ও ১৯ রান দিয়েছেন আবুল হাসান ও আবু জায়েদ। আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে কোনো রকম সমীহই আদায় করতে পারেননি তারা।

পেসারদের যখন এই দুর্দশা, সাকিব আল হাসান তখন প্রথম ম্যাচে কোনো এক অজানা কারণে স্পিনারদের উপর ভরসা করেননি। স্পিনাররা তাদের ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৫৫ রান। বাকি ১০ ওভারে তিন পেসার দিয়েছেন ১১২ রান! ম্যাচটা যে পেসারদের কারণেই বাংলাদেশের নাগালের বাইরে চলে গেছে, এ নিয়ে নিশ্চয় প্রশ্ন নেই কারো।

তারপরও যদি প্রশ্ন থাকে, তবে তা থাকতে পারে আফগানিস্তানের স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অদূরদর্শিতা নিয়ে। সিরিজের বেশ আগে থেকেই রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের স্পিন নিয়ে কথা হচ্ছিলো। তাদেরকে সাবধানে খেলা নিয়ে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের ব্যাপক প্রস্তুতিও ছিলো। কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচে দেখা গেলো প্রথম বলেই তামিমকে বিদায় করে দিলেন মুজিব। আর রশিদ প্রথম দুই বলে তুলে নিলেন মুশফিক ও সাব্বিরের উইকেট।

প্রথম ম্যাচের স্মৃতিটা আপাতত এতো বেশি প্রভাব বিস্তার করছে যে, দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে টিকে থাকার সাহসটাই হয়তো ঠিক মতো করতে পারছেন না সাকিবরা। সাহস করতে পারুন বা না পারুন, দ্বিতীয় ম্যাচটা জেতা ছাড়া সাকিবদের করারও কিছু নেই। কারণ এটি হারলে যে আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারের কলঙ্ক নিয়ে দেশে ফিরতে হবে।

যাদের কাছে একটা ম্যাচ হারের কারণেই দেশে প্রায় শোকের মাতম চলছে, তাদের কাছে সিরিজ হেরে এলে কী হবে কে জানে!