মোহাম্মদ আশরাফুল; একটি নাম, একটি ইতিহাস। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস লিখতে গেলে, অবশ্যই যার নামে রাখতে হবে একটি পুরো অধ্যায়। যে অধ্যায় শুরু হবে উত্থানের অবিশ্বাস্য গল্প দিয়ে। এরপর যে অধ্যায় এগোবে আরো উত্থান এবং হঠাৎ পতনের টানটানা রোমাঞ্চের গল্পে।

mohammad ashraful bangladeshi test player

আবির্ভাবেই আশরাফুল বিশ্ব ক্রিকেটে ছড়িয়ে দেন তার অস্তিত্বের ঘোষণা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিনে টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে তিনি হৈচৈ ফেলে দেন পুরো বিশ্বে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি হয়ে যান দেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার। এরপর আশরাফুল খেলেছেন আরো অসাধারণ সব ইনিংস। তার ক্যারিয়ারের সাতটি অবিস্মরণীয় ইনিংস নিয়ে এই আয়োজন।

অস্ট্রেলিয়া-বধ: ২০০৫, কার্ডিফ

এক যুগেরও বেশি সময় আগের কথা। বাংলাদেশ তখন ক্রিকেট বিশ্বের জন্য এক বোঝার নাম। যারা শুধু খেলে, কিন্তু জয়ের দেখা বলতে গেলে পায়ই না। টেস্টে তো বাংলাদেশ তখন দাঁড়াতেই পারে না। ওয়ানডেতেও যাচ্ছেতাই অবস্থা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই দুঃসহ সময়ে মোহাম্মদ আশরাফুল এমন এক ইনিংস খেললেন, যে ইনিংসে ভর করে দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসই গেলো বদলে। ২০০৫ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখ, কার্ডিফে আশরাফুলের চোখ ধাঁধানো এক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ হারিয়ে দিলো অস্ট্রেলিয়াকে! গ্লেন ম্যাকগ্রা, জ্যাসন গিলেস্পিদের মতো পেসারদের খেলে সেই ম্যাচে ঠিক ১০০ বলে ১০০ রান করেন আশরাফুল। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি।

পাঁচ বছরের জয়ক্ষরা কাটানোর হাফ সেঞ্চুরি: ২০০৪, হারারে

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে একটা ঝড় বইয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেই ঝড়ের গতিতে ভর করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো আরো বহু দূর। কিন্তু কী এক অবিশ্বাস্য কারণে পরের ওয়ানডেতে জিততে বাংলাদেশের লেগে যায় পাঁচ বছর! জিম্বাবুয়ে তখন বাংলাদেশের সামনে প্রবল প্রতাপশালী এক প্রতিপক্ষ। সেই তাদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের তৃতীয়টিতে গিয়ে ২৩৮ রান করে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ২৩০ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ওই ম্যাচে আশরাফুল ছয় নম্বরে নেমে ৩২ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার ওই ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিই লিখে দেয় বাংলাদেশের জেতার চিত্রনাট্য।

ashraful playing a shot during a odi match

অভিষেকেই ইতিহাস কাঁপানো ১১৪: ২০০১, কলম্বো

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রবেশ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিলো। কারণ টেস্ট ক্রিকেট খেলার মতো যথেষ্ট অবকাঠামো বাংলাদেশের ছিলো না। হুট করে পাওয়া টেস্ট স্ট্যাটাস থেকে পাওয়া সুযোগে টেস্ট খেলতে নেমে পারফর্মও হচ্ছিলো না সেভাবে। এর মধ্যেই ২০০১ সালে ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সী আশরাফুলকে শক্তিশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষ নামিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে টেস্ট সেঞ্চুরি করে বসেন আশরাফুল! যা সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড হয়ে এখনো টিকে আছে।

ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় ১৫৮: ২০০৪, চট্টগ্রাম

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের খুঁড়িয়ে পথ চলা তখনো অব্যাহত। টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম দেশকে যারাই সামনে পায়, তারাই দুমড়ে মুচড়ে দেয়। দেশে কিংবা দেশের বাইরে কোনো প্রতিপক্ষেরে সামনেই বুকটান করে দাঁড়াতে পারে না বাংলাদেশ। ওই রকম বিরুদ্ধ সময়ে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১৫৮ রানের হার না মানা টেস্ট ইনিংস খেলেন আশরাফুল। যা টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম একশ পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। ওই ইনিংস খেলে আশরাফুল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই বিশ্বাস রচনা করেন যে, টেস্টে বাংলাদেশিরাও বড় ইনিংস খেলতে পারেন।

mohammad ashraful and mushfiqur rahim during test match in sri lanka 2013

বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা-বধ: ২০০৭, প্রভিডেন্স

২০০৭ সালের বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ জমিয়ে তুলে ভারতকে বিদায় করে। ভারতকে বিদায় করার ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেন সেই সময়ের তিন তরুণ তুর্কি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। বিশ্বকাপ থেকে হয়তো বাংলাদেশের আর কিছুই আশা করার ছিলো না। কিন্তু আশরাফুল চেয়েছিলেন আরো বেশি। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে এবং জয়টি আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে ভর করে। ৮৭ রান হয়তো খুব বড় কিছু নয়। কিন্তু যখন আপনি জানবেন সেই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল বোলার ছিলেন শন পোলক ও মাখায়া এনটিনি, তখন কিন্তু আশরাফুলকে একটা স্যালুটই দিতে ইচ্ছে করবে!

জয় দিয়ে শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ২০০৭, জোহানেসবার্গ

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপ। যে বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে আছে ভারতের অসাধারণ জয়ে। ওই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ হারায় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। যারা পরে সর্বোচ্চ দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাত্র ২৭ বলে ৬১ রান করেন মোহাম্মদ আশরাফুল। প্রায় এক যুগ আগেই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান ২৭ বলে ৬১ রান করে রেখেছেন, অনেকের কাছে তথ্যটা অবিশ্বাস্যই লাগবে; একেবারে আশরাফুলের ক্যারিয়ারের মতো!

শ্রীলঙ্কায় আশরাফুলের লঙ্কাকাণ্ড: ২০১৩, কলম্বো

৬১ ম্যাচে থমকে থাকা টেস্ট ক্যারিয়ারে আশরাফুল সেঞ্চুরি করেছেন ছয়টি। এর মধ্যে পাঁচটিই তিনি করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লঙ্কানরা যে তার কতো প্রিয় প্রতিপক্ষ তা তিনি প্রমাণ করেছেন তার সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরেও। যেখানে নিজের আগের সর্বোচ্চ ১৫৮ রানকে পেছনে ফেলে ১৯০ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন তিনি। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫৭০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে লঙ্কানরা। হয়তো তারা ভেবেছিলো এদের বিপক্ষে আর কতো করবো! কিন্তু বাংলাদেশ করে দেয় ৬৩৮ রান! আশরাফুলের লঙ্কাকাণ্ডের পাশাপাশি জ্বলে উঠেন মুশফিকও। তার ব্যাট থেকে আসে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। একটুর জন্য যা মিস করেন আশরাফুল।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.