মুশফিকের বীরত্বে মুগ্ধ তার কোচ

স্কোরবোর্ডে এক রান উঠতে না উঠতেই দুই উইকেট হাওয়া। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে আরো একজনের বিদায়। কার্যত দুই ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের তখন ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বপ্নের বেলুন ফুটো হয়ে যাওয়ার ঘটনা বহুবার প্রত্যক্ষ করেছেন দর্শকরা। সে রকম আরো একটা পরিস্থিতিই হতে বসেছিলো এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে। কিন্তু মুশফিকুর রহিম অসাধারণ দক্ষতায় বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন। এনে দিয়েছেন জেতার শক্তি।

এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে মুশফিক খেলেছেন ইনজুরি নিয়ে। তার পাঁজরের হাড়ে ছিলো দারুণ ব্যথা। কিন্তু দল যখন বিপর্যয়ে, মুশফিকের মতো দল অন্ত:প্রাণ খেলোয়াড় কি তখন আর নিজের ব্যথার কথা মনে রাখেন? মুশফিকও রাখেননি। বরং নিজেকে দিয়েছেন উজাড় করে। খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ওয়ানডে ইনিংস। বুকের ব্যথা আড়ালে ফেলে করেছেন ১৪৪ রান। এশিয়া কাপে যা ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে দ্বিতীয়। 

শিষ্যের এ কম বীরত্বে যারপরনাই খুশি নাজমুল আবেদীন ফাহিম। মুশফিক যখন বিকেএসপির শিক্ষার্থী ছিলেন, নাজমুল তখন ছিলেন তার কোচ। মুশফিক জাতীয় দলের তারকা হয়ে যাওয়ার পরও ছোটবেলার কোচের সান্নিধ্যে চলে যান প্রায়ই। নিজের খেলা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হলে এখনো নেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।

নাজমুলের খুশিটা তাই সহজেয় অনুমেয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩৭ রানের জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরুর দুদিন পর মুশফিককে প্রশংসার বৃষ্টিতে ভেজালেন নাজমুল। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পরিবেশে মুশফিক আগেও অনেকবার পড়েছে এবং পারফর্ম করেছে। ওর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিলো। ও ভেবেছিলো কোনোভাবেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা যাবে না। পারফর্ম করতে হবে। ও তাই করেছে। ও জানে যে, যে কোনো সময় টপঅর্ডারে ধস নামতে পারে। সেটা মাথায় রেখেই ও প্রথমে ধরে খেলেছে এবং সুযোগ পেলে দ্রুত রান করার অপেক্ষায় থেকেছে।’

নাজমুল মনে করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে কী করতে হবে, তার একটা শিক্ষা মুশফিক এখান থেকেই পেয়ে গেলো। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় মুশফিকের খেলায় এই ইনিংসের ছায়া সামনেও দেখা যাবে এবং সে এখান থেকে অবশ্যই শিক্ষা নিয়ে এগোবে। আমরা ওর কাছ থেকে এ রকম আরো ইনিংস দেখতে পারবো।’

মুশফিক যে এ দিন শুধু মানসিক শক্তিই দেখিয়েছেন তা কিন্তু নয়, তার ব্যাটেও ছিলো পরিণত একজন ব্যাটসম্যানের অসাধারণ সামর্থ্যের প্রদর্শনী। নাজমুল এ বিষয়েও প্রশংসা করেছেন তার শিষ্যের।

নাজমুল বলেন, ‘মুশফিকের এই ইনিংসে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিলো। দেখা যায় এমন কঠিন সময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলেও সেটা মেনে চলার মত সাহস সবার থাকে না, মানসিক শক্তি থাকে না। পরিকল্পনা থাকার পরও সেটা থেকে যে কোন সময় সরে যাওয়ার, বাজে শট খেলার দৃশ্য দেখা যায় এবং এতে উইকেট হারাতে হয়। এই ইনিংসে আমরা সে রকম কিছু দেখিনি। ওর সব শট সিলেকশন ছিল পারফেক্ট। সবচেয়ে বড় করা, সে যেই ধৈর্যটা নিয়ে খেলল, সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।'