দুর্দান্ত বাংলাদেশের সামনে নড়বড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওপেনিং নিয়ে মধুর একটা সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ। ইনজুরি কাটিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ফিরেই সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল। একই ম্যাচে ঝড়ো শতক হাঁকিয়েছেন সৌম্য সরকারও। ওদিকে ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ইমরুল কায়েস এবং লিটন দাসও একাদশে সুযোগের দাবিদার।

এই চার ওপেনারের ভাগ্যে কী আছে? শনিবার ওয়ানডে সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বললেন, ‘হাতে পারে অনেক কিছুই’। ঠিক কী হবে সেটা অনুমান করা যাচ্ছে। অন্তত তিনজনকে একাদশে রাখতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। বোলিং বিভাগেও একই- সংকট। নির্বাচকরা কাকে রেখে কাকে খেলাবেন তা নিয়ে।

যদিও টপ অর্ডারের মতো অত হিসেব-নিকেশ করতে হচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্টকে। সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচে বিশ্রাম পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান এবং মেহেদি হাসান মিরাজকে আজ মাঠে ফেরাচ্ছেন তারা। বোলিং এবং ব্যাটিং দুই বিভাগের ভরসা সাকিব আল হাসানও মাঠে ফিরছেন।

সবমিলিয়ে পূর্ণশক্তির দল নিয়েই তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর একটায় অনুষ্ঠিত হবে লড়াইটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট এইচডি ২।

ব্যক্তিগতভাবে ঘরের মাঠে লড়াইটা মাশরাফির জন্য বিশেষকিছুর উপলক্ষ্য। আজ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০তম ম্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করবেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সম্ভবত এই সিরিজটা দেশের মাটিতে ‘নড়াইল এক্সপ্রেসে’র শেষ সিরিজ। আবেগ ছুঁয়ে যাওয়ার কথা তার।

কিন্তু ব্যক্তিগত অর্জন কিংবা রেকর্ড যে কখনোই স্পর্শ করতে পারে না মাশরাফিকে! ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকেও যথারীতি দলের জয়ের ভাবনার কথাই জানালেন তিনি। মাশরাফি বলেছেন, ‘আমার কাছে দলের জয়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জিততে হবে।’ সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশের চাওয়াটা একেবারেই অমূলক নয়।

জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে আজ মাঠে নামবে নড়বড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। বছরটা যে খুব বাজেভাবে কাটছে তাদের। প্রান্তসীমায় আসা বছরে কোনো ওয়ানডে সিরিজে জিততে পারেনি তারা। সবশেষ ভারতের মাটিতে ভালো পারফরম্যান্স করলেও সিরিজ হার এড়াতে পারেনি ক্যারিবীয়রা।

বছরের শেষটা স্বস্তি নিয়ে শেষ করতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজে সম্ভাব্য সবটুকু নিংড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ঝড়েছে ক্যারিবীয় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলের কণ্ঠে। এ যাত্রায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাচ্ছে না বিধ্বংসী ওপেনার এভিন লুইসকে। বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তির ঝামেলার কারণে এই সিরিজের দলে নেই তিনি।

দুই বছর পর দলে ফেরা ড্যারেন ব্রাভো আজ প্রত্যাবর্তন করছেন মাঠে। তার অনুপস্থিতি গত এক বছর ভুগিয়েছে ক্যারিবীয়দের। অন্য অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদেরও অধিকাংশ আছেন দলের বাইরে। তাই আজ অনেক বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে খেলতে হচ্ছে ব্র্যাভোকে।

দায়িত্ব নিয়ে খেলছেন তরুণ ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপও। নিজেদের দিনে এই তরুণ যুগল বোলারদের কতটা ভোগাতে পারে সেটা কম-বেশি টেস্ট সিরিজে দেখিয়েছেন তারা। ছন্দটা ওয়ানডেতেও বয়ে আনতে চান হেটমায়ার-হোপ। মুস্তাফিজ-সাকিব-মিরাজরা তাদের সেই সুযোগটা দিতে চাইবেন না।

সে যাই হোক। আজ টস ভাগ্য নিজেদের অনুকূলে চাইবে দুই দলই। কন্ডিশন এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ম্যাচের বড় একটা প্রভাবক হতে পারে মুদ্রা নিক্ষেপের লড়াই। ম্যাচের দ্বিতীয় পর্বে শিশির যে কোনো দলকেই বেকায়দায় ফেলতে পারে।

টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। স্পিনবিষে ক্যারিবীয়দের ঘায়েল করেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের ঘূর্ণি তোপে দিশেহারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ পর্যন্ত হোয়াইটওয়াশই হয়েছে। যেখানে অবদান নেই স্বাগতিক পেসারদের। স্বাভাবিকভাবেই হতাশ পেসাররা।

চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের দলে একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা মুস্তাফিজুর রহমান দুই ইনিংসে বোলিং করেছেন মাত্র চার ওভার। ঢাকায় পরের টেস্টে তো একাদশ থেকেই ছিটকে গেছেন তিনি। প্রথমবারের মতো পেসার ছাড়া খেলতে নামার সুফলটা অবশ্য পেয়েছে বাংলাদেশ।

দল ভালো করলেও পেসারদের মধ্যে একটা অসন্তুষ্টি লুকিয়ে আছে। সেটা আবার কদিন আগে খোলাসা করে দিয়েছেন রুবেল হোসেন। তাই ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিতে চান রুবেল-মুস্তাফিজরা। বাংলাদেশের পেসাররা যে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য রাখেন সেটা কাল আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। জানালেন তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামছেন তারা।

সম্ভাব্য একাদশ:

বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক) এবং মুস্তাফিজুর রহমান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: কাইরেন পাওয়েল, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), ড্যারেন ব্রাভো, মারলন স্যামুয়েলস, শিমরন হেটমায়ার, রোস্টন চেজ, রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন/দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ এবং ওশান টমাস।