ফাইনালে এক পা রিয়াল মাদ্রিদের

এগিয়ে থেকেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল না বায়ার্ন মিউনিখ। বুধবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বাভারিয়ানদের ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দারুণ এই জয়ের ফলে ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গেল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।

সেমিফাইনালের মহাযুদ্ধ দুই দলের জন্য দুই রকম প্রেক্ষাপট নিয়ে এসেছিল। বায়ার্নের জন্য ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার, রিয়ালের জন্য হ্যাটট্রিক শিরোপার সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার। বায়ার্নের স্বপ্ন ইতোমধ্যেই পড়ে গেছে হুমকির মুখে। ঘরের মাঠ অ্যালিয়েঞ্জ এরিনায় প্রথম লেগের হারটা খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে তাদের।

স্বপ্ন বাঁচাতে আগামী মঙ্গলবার রিয়ালের দুর্গ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দারুণ কিছু করে দেখাতে হবে জার্মান ক্লাবটিকে। জিততে হবে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে। কারণ প্রথম লেগের জয় এবং দুটো অ্যাওয়ে গোল নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে রাখবে রিয়াল মাদ্রিদকে।

চেনা দর্শকদের সামনে বায়ার্নের শুরুটাই হয়েছিল একটা ধাক্কাটা দিয়ে। শুরুর বাঁশির কয়েক মিনিটের মধ্যে চোট নিয়ে মাঠ থেকে বেড়িয়ে যেতে হয় আরিয়েন রোবেনকে। ধাক্কাটা ২৮ মিনিটে কাটিয়ে উঠেছিল বাভারিয়ান ক্লাবটি; যখন দুর্দান্ত শটে রিয়ালের জাল কাঁপিয়ে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন জসুয়া কিমিচ (১-০)।

কিন্তু লিডটা ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। বিরতির এক মিনিট আগে ২৫ গজ দূর থেকে করা মার্সেলোর চমৎকার হাফ-ভলিটা খুঁজে নেয় বায়ার্নের জালের ঠিকানা (১-১)। সমতায় ফেরার পাশাপাশি ম্যাচের লাগামটাও নিজেদের হাতে তুলে নেয় জিদানের দল। বিরতি থেকে ফিরে বায়ার্নের টুটি চেপে ধরে রিয়াল।

৫৭ মিনিটে স্প্যানিশ জায়ান্টরা করে দ্বিতীয় গোল। রক্ষণপ্রহরী রাফিনহার শিশুসুলভ ভুলের খেসারত দিতে হয় দলকে। গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন মার্কো অ্যাসেনসিও (২-১)। স্প্যানিশ তরুণ তুর্কির এই গোলটিই শেষ পর্যন্ত রিয়ালের জয়ের অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। গোলটা আর শোধ দিতে পারেনি বায়ার্ন। বল দখল এবং আক্রমণে এগিয়ে থেকেও হার ঠেকাতে পারেনি তারা।

গোল শোধে মরিয়া ইয়ুপ হেইঙ্কেসের দল শেষের কয়েক মিনিট রীতিমতো শারীরী ফুটবলে মেতে ওঠে। কম যায়নি রিয়ালও। ফাউলের জবাব ফাউলে দিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।

এমন পাগলাটে কয়েক মিনিটের জন্য কার্ড খরচ তো দূরের কথা, রেফারি পক্ষে ফাউলের বাঁশি বাজানো-ও যেন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছিল! ম্যাচ শেষে রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন রিয়ালের ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে। কোমড়ে চোট পেয়েছেন আবার ব্রাজিলিয়ান তারকা মার্সেলো।

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ঘটে যায় আরেক কাণ্ড। বায়ার্ন মিউনিখের কয়েকজন সমর্থক ঢুকে পড়েন মাঠে। প্রিয় ফুটবলারের সান্নিধ্য পেতে রীতিমতো পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করেন তারা! তবে কোনো বিশৃঙ্খলার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। মাঠ থেকে বের দেন বেপরোয়া দর্শকদের।

এ দিন দলীয় লড়াইয়ের ফাঁকে নজরে ছিলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং রবার্ট লেভানডফস্কির ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শদের দ্বৈরথটা। ধারণা করা হচ্ছিল এ যুগলের লড়াই গড়ে দিতে ম্যাচের ভাগ্য। কিন্তু এদিন দুজনই থাকলেন নিষ্প্রভ।

বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার। রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস এদিন অতিমানব না হয়ে উঠলে হয়তো একটা গোল পেতে পারতেন লেভা। নাভাসের ম্যাচে রোনালদো খেললেন নিজের ছায়া হয়ে। ৭০ মিনিটে অবশ্য একটা গোল করেছিলেন রোনালদো। কিন্তু হ্যান্ডবলের কারণে সেটা বাতিল করে দেন রেফারি।